পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ꮼ O O গল্পগুচ্ছ বাব বুঝি মনে মনে আমাদের প্রতি অবজ্ঞা অনুভব করিতেছেন। আমি রাগ করিতাম এবং ভাবিতাম, অবজ্ঞার যোগ্য কে। যে লোক সমস্ত জীবন কঠোর ত্যাগস্বীকার করিয়া, নানা প্রলোভন অতিক্ৰম করিয়া, লোকমুখের তুচ্ছ খ্যাতি অবহেলা করিয়া, অশ্রান্ত এবং সতক বধি-কৌশলে সমস্ত প্রতিকলে বাধা প্রতিহত করিয়া, সমস্ত অনকেল অবসরগুলিকে আপনার আয়ত্তগত করিয়া একটি একটি রৌপ্যের স্তরে সম্পদের একটি সমক্ষে পিরামিড একাকী স্বহস্তে নিমাণ করিয়া গিয়াছেন, তিনি হটির নীচে কাপড় পরিতেন না বলিয়া যে কম লোক ছিলেন তাহা নয়। তখন বয়স অলপ ছিল, সেইজন্য এইরুপ তক’ করিতাম, রাগ করিতাম। এখন বয়স বেশি হইয়াছে; এখন মনে করি, ক্ষতি কী। আমার তো বিপলে বিষয় আছে, আমার কিসের অভাব। ষাহার কিছু নাই, সে যদি অহংকার করিয়া সখী হয়, তাহাতে আমার তো সিকি পয়সার লোকসান নাই, বরং সে বেচারার সাতুন আছে। ইহাও দেখা গিয়াছে, আমি ব্যতীত আর কেহ কৈলাসবাবর উপর রাগ করিত না। কারণ এত বড়ো নিরীহ লোক সচরাচর দেখা যায় না। ক্লিয়াকমে সুখে দুঃখে প্রতিবেশীদের সহিত তাঁহার সম্পণে যোগ ছিল। ছেলে হইতে বন্ধ পর্যন্ত সকলকেই দেখা হইবামাত্র তিনি হাসিমুখে প্রিয়সম্ভাষণ করিতেন-- যেখানে যাহার যে-কেহ আছে সকলেরই কুশলসংবাদ জিজ্ঞাসা করিয়া তবে তাঁহার শিষ্টত বিরাম লাভ করিত। এইজন্য কাহারও সহিত তাঁহার দেখা হইলে একটা সন্দীঘ প্রশ্নোত্তরমালার সন্টি হইত—“ভালো তো ? শশী ভালো আছে - আমাদের বড়োবাব ভালো আছেন : মধর ছেলেটির জদর হয়েছিল শুনেছিলাম, সে এখন ভালো আছে তো ? হরিচরণবাবকে অনেককাল দেখি নি, তাঁর অসুখবিসুখ কিছু হয় নি ? তোমাদের রাখালের খবর কী। বাড়ির এয়াবা সকলে ভালো আছেন ?” ইত্যাদি। লোকটি ভারি পরিকার পরিচ্ছন্ন। কাপড়চোপড় অধিক ছিল না, কিন্তু মেরজাইটি চাদরটি জামাটি, এমন কি, বিছানায় পাতিবার একটি পরাতন র্যাপার, বালিশের ওয়াড়, একটি ক্ষুদ্র সতরণ, সমস্ত স্বহস্তে রৌদ্রে দিয়া, ঝাড়িয়া, দড়িতে খাটাইয়া, ভজি করিয়া, আলনায় তুলিয়া, পরিপটি করিয়া রাখিতেন। যখনই তাঁহাকে দেখা যাইত তখনই মনে হইত যেন তিনি সসক্তিত প্রস্তুত হইয়া আছেন। অপেস্বল্প সামান্য আসবাবেও তাঁহার ঘরবার সমঙ্গেল হইয়া থাকিত। মনে হইত যেন তাঁহার আরও অনেক আছে। ভৃত্যভাবে অনেক সময় ঘরের বার বন্ধে করিয়া তিনি নিজের হস্তে অতি পরিপাটি করিয়া ধতি কোঁচাইতেন এবং চাদর ও জামার আতিন বহয় যত্নে ও পরিশ্রমে গিলে করিয়া রাখতেন। তাঁহার বড়ো বড়ো জমিদারি ও বহমোলোর বিষয়সম্পত্তি লোপ পাইয়াছে, কিন্তু একটি বহমাল্য গোলাপপাশ, আতরদান, একটি সোনার রেকবি, একটি রুপার আলবোলা, একটি বহমাল্য শাল ও সেকেলে জামাজোড়া ও পাগড়ি দারিদ্র্যের গ্রাস হইতে বহ চেষ্টায় তিনি রক্ষা করিয়াছিলেন । কোনো-একটা উপলক্ষ্য উপস্থিত হইলে এইগলি বাহির হইত এবং নয়নজোড়ের জগদবিখ্যাত বাবদের গৌরব রক্ষা হইত। এ দিকে কৈলাসবাব মাটির মানুষ হইলেও কথায় যে অহংকার করিতেন সেটা যেন পাব পরষদের প্রতি কতব্যবোধে করিতেন; সকল লোকেই তাহাতে প্রশ্রয় দিত