পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ইচ্ছাপত্রণ ළු86: ব্যাঘাত হইত। তাই সে জোর করিয়া সবেলকে ধরিয়া সম্মুখে বসাইয়া হাতে একখানা স্লেট দিয়া অকি কষিতে দিত। অকিগুলো এমনি বড়ো বড়ো বাছিয়া দিত যে, তাহার একটা কষিতেই তাহার বাপের এক ঘণ্টা চলিয়া যাইত। সন্ধ্যাবেলায় বড়া সশেলের ঘরে অনেক বড়ায় মিলিয়া দাবা খেলিত। সে সময়টায় সবলকে ঠাণ্ডা রাখিবার জন্য সশীল একজন মাস্টার রাখিয়া দিল; মাস্টার রাত্রি দশটা পৰ্যন্ত তাহাকে পড়াইত। খাওয়ার বিষয়ে সশীলের বড়ো কড়াক্কড় ছিল। কারণ তাহার বাপ সবল যখন বন্ধ ছিলেন, তখন তাঁহার খাওয়া ভালো হজম হইত না, একটু বেশি থাইলেই অবল হইত— সশীলের সে কথাটা বেশ মনে আছে; সেইজন্য সে তাহার বাপকে কিছতেই অধিক খাইতে দিত না। কিন্তু হঠাৎ অল্পবয়স হইয়া আজকাল তাঁহার এমনি ক্ষুধা হইয়াছে যে, নড়ি হজম করিয়া ফেলিতে পারিতেন। সশীল তাঁহাকে যতই অলপ খাইতে দিত, পেটের জবালায় তিনি ততই অসিথর হইয়া বেড়াইতেন । শেষকালে রোগা হইয়া শুকাইয়া তাঁহার সবাগের হাড় বাহির হইয়া পড়িল । সুশীল ভাবিল, শক্ত ব্যামো হইয়াছে, তাই কেবলই ঔষধ গিলাইতে লাগিল । বড়া সশেলেরও বড়ো গোল বাধিল । সে তাহার পর্বকালের অভ্যাসমত যাহা করে তাহাই তাহার সহ্য হয় না। পবে সে পাড়ায় কোথাও যাত্রাগানের খবর পাইলেই, বাড়ি হইতে পালাইয়া, হিমে হোক, বটিতে হোক, সেখানে গিয়া হাজির হইত। আজিকার বড় সশীল সেই কাজ করিতে গিয়া, সদিী হইয়া, কাশি হইয়া, গারে মাথায় ব্যথা হইয়া, তিন হপতা শয্যাগত হইয়া পড়িয়া রহিল। চিরকাল সে পলকুরে স্নান করিয়া আসিয়াছে, আজও তাহাই করিতে গিয়া হাতের গটি, পায়ের গটি ফলিয়া বিষম বাত উপস্থিত হইল ; তাহার চিকিৎসা করিতে ছয় মাস গেল। তাহার পর হইতেই দুই দিন অন্তর সে গরম জলে স্নান করিত এবং সবলকেও কিছুতেই পাকুরে স্নান করিতে দিত না। পবোকার অভ্যাসমত, ভুলিয়া তক্তপোষ হইতে সে লাফ দিয়া নামিতে যায়, আর হাড়গুলো টনটন ঝন ঝন করিয়া উঠে। মুখের মধ্যে আসন্ত পান পরিয়াই হঠাৎ দেখে, দাঁত নাই, পান চিবানো অসাধ্য। ভুলিয়া চিরনি ব্ৰশ লইয়া মাথা অচিড়াইতে গিয়া দেখে, প্রায় সকল মাথাতেই টাক। এক-একদিন হঠাৎ ভুলিয়া যাইত যে, সে তাহার বাপের বয়সী বড়ো হইয়াছে এবং ভুলিয়া পাবেীর অভ্যাসমত দষ্টামি করিয়া পাড়ার বাড়ি আদিপিসির জলের কলসে হঠাৎ ঠন করিয়া ঢিল ছ:ড়িয়া মারিত— বড়ামানুষের এই ছেলেমানষি দুষ্টামি দেখিয়া, লোকেরা তাহাকে মার মারা করিয়া তাড়াইযা যাইত, সেও লক্ষজায় মুখ রাখিবার জায়গা পাইত না। সবলচন্দ্রও এক-একদিন দৈবাৎ ভুলিয়া যাইত যে, সে আজকাল ছেলেমানষে হইয়াছে। আপনাকে পবের মতো বড়া মনে করিয়া, যেখানে বড়ামানুষেরা তাসপাশা খেলিতেছে সেইখানে গিয়া সে বসিত এবং বড়ার মতো কথা বলিত; শুনিয়া সকলেই তাহাকে “যা যা, খেলা করা গে যা, জ্যাঠামি করতে হবে না” বলিয়া কান ধরিয়া বিদায় করিয়া দিত। হঠাৎ ভুলিয়া মাস্টারকে গিয়া বলিত, “দাও তো, তামাকটা দাও তো, খেয়ে নিই।” শুনিয়া মাস্টার তাহাকে বেঞ্চের উপর একপায়ে দাঁড় করাইয়া দিত। নাপিতকে গিয়া বলিত, "ওরে বেঞ্জা, কদিন আমাকে কামাতে আসিস নি কেন।” নাপিত ভাবিত, ছেলেটি খবে ঠাট্টা করিতে শিখিয়াছে। সে উত্তর দিত, “আর বছর দশেক বাদে আসব এখন " আবার এক-একদিন তাহার পবের অভ্যাসমত তাহার ছেলে