পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○○ 。 গল্পগুচ্ছ কেশরলাল বহনকাল হইল নেপাল ত্যাগ করিয়া কোথায় চলিয়া গিয়াছে কেহ জানে না। তাহার পর পাহাড়ে পাহাড়ে ভ্রমণ করিতেছি। এ হিন্দরে দেশ নহে— ভুটিয়ালেপচাগণ মেলচ্ছ, ইহাদের আহার-ব্যবহারে আচার বিচার নাই, ইহাদের দেবতা, ইহাদের পজাচনাবিধি সকলই স্বতন্ত্র; বহুদিনের সাধনায় আমি যে বিশ্বন্ধ শাচিতা লাভ করিয়াছি, ভয় হইতে লাগিল, পাছে তাহাতে রেখামাত্র চিহ্ন পড়ে। আমি বহন চেষ্টায় আপনাকে সব প্রকার মলিন সংপশ হইতে রক্ষা করিয়া চলিতে লাগিলাম। আমি জানিতাম, আমার তরী তীরে আসিয়া পৌছিয়াছে, আমার জীবনের চরমতীথ অনতিদারে। তাহার পরে আর কী বলিব । শেষ কথা অতি স্বপে। প্রদীপ যখন নেবে তখন একটি ফৎকারেই নিবিয়া যায়, সে কথা আর সন্দীঘ করিয়া কী ব্যাখ্যা করিব। আটত্রিশ বৎসর পরে এই দাজিলিঙে আসিয়া আজ প্রাতঃকালে কেশরলালেব দেখা পাইয়াছি।” বক্তাকে এইখানে ক্ষান্ত হইতে দেখিয়া আমি ঔৎসুক্যের সহিত জিজ্ঞাসা করিলাম, “কী দেখিলেন।” নবাবপত্রী কহিলেন, “দেখিলাম, বন্ধ কেশরলাল ভুটিযাপল্লীতে ভুটিয়া দী এবং তাহার গভর্ন্তজাত পৌত্রপৌত্রী লইয়া মলানবস্ত্রে মলিন অঙ্গনে ভুট্টা হইতে শস্য সংগ্ৰহ করিতেছে।” গল্প শেষ হইল ; আমি ভাবিলাম, একটা সাত্বনার কথা বলা আবশ্যক। কহিলাম, “আটত্রিশ বৎসর একাদিক্ৰমে যাহাকে প্রাণভয়ে বিজাতীয়ের সংস্রবে অহরহ থাকিতে হইয়াছে সে কেমন করিয়া আপন আচার রক্ষা করিবে ।” নবাবকন্যা কহিলেন, “আমি কি তাহা বুঝি না। কিন্তু এতদিন আমি কী মোহ লইয়া ফিরিতেছিলাম ! ষে ব্রহমণ্য আমার কিশোর হদয় হরণ করিয়া লইয়াছিল আমি কি জানিতাম তাহা অভ্যাস তাহা সংস্কার মাত্র। আমি জ্ঞানিতাম তাহা ধম", তাহা অনাদি অনন্ত। তাহাই যদি না হইবে তবে ষোলো বৎসর বয়সে প্রথম পিতৃগহ হইতে বাহির হইয়া সেই জ্যোৎস্নানিশীথে আমার বিকশিত পপিত ভক্তিবেগকল্পিত দেহমনপ্রাণের প্রতিদানে ব্রাহরণের দক্ষিণ হস্ত হইতে যে দুঃসহ অপমান প্রাপ্ত হইয়াছিলাম, কেন তাহা গ্রহস্তের দীক্ষার ন্যায় নিঃশব্দে অবনত মস্তকে বিগণিত ভক্তিভরে শিরোধাষা করিয়া লইয়াছিলাম। হায় ব্রাহরণ, তুমি তো তোমার এক অভ্যাসের পরিবতে' আর এক অভ্যাস লাভ করিয়াছ, আমি আমার এক যৌবন এক জীবনের পরিবতে আর-এক জীবন যৌবন কোথায় ফিরিয়া পাইব ।” এই বলিয়া রমণী উঠিয়া দাঁড়াইয়া কহিল, “নমস্কার বাবুজি !" মহতপরেই যেন সংশোধন করিয়া কহিল, “সেলাম ব্যবসাহেব!” এই মসলমানঅভিবাদনের বারা সে যেন জীর্ণভিত্তি ধলিশায়ী ভগ্ন ব্রহণের নিকট শেষ বিদার গ্রহণ করিল। আমি কোনো কথা না বলিতেই সে সেই হিমাদ্রিশিখরের ধসের কুজৰাটিকারাশির মধ্যে মেঘের মতো মিলাইয়া গেল । தி আমি ক্ষণকাল চক্ষ মাদিত করিয়া সমস্ত ঘটনাবলী মানসপটে চিয়িত দেখিতে লাগিলাম। মছলন্দের আসনে যমনাতীরের গবাক্ষে সুখাসীনা ষোড়শী নবাববালিকাকে