পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

osb গল্পগুচ্ছ বাড়ির মাতুলালয়ে যাইতাম, তখন সবদাই সেখান হইতে তোমাদের বাড়ি গিয়া তোমার সহিত অনেক খেলা করিয়াছি। আমাদের সে খেলাঘর এবং সে খেলার সম্পক ভাঙিয়া গেছে। তুমি জান কি না বলিতে পারি না, একসময় ধৈষের বধি ভাঙিয়া এবং লন্জার মাথা খাইয়া তোমার সহিত আমার বিবাহের সম্প্রবন্ধ-চেস্টাও করিয়াছিলাম, কিন্তু আমাদের বয়স প্রায় এক বলিয়া উভয় পক্ষেরই কতারা কোনোক্রমে রাজি হইলেন না। তাহার পর তোমার বিবাহ হইয়া গেলে চারপাঁচ বৎসর তোমার আর কোনো সন্ধান পাই নাই। আজ পাঁচ মাস হইল তোমার স্বামী কলিকাতার পলিসের কম লইয়া শহরে বদলি হইয়াছেন, খবর পাইয়া আমি তোমাদের বাসা সন্ধান করিয়া বাহির করিয়াছি। তোমার সহিত সাক্ষাতের দরাশা আমার নাই এবং অন্তষামী জানেন, তোমার গাহপথ্যসখের মধ্যে উপদ্রবের মতো প্রবেশ করিবার দরভিসন্ধিও আমি রাখি না। সন্ধ্যার সময় তোমাদের বাসার সম্মুখবতী একটি গ্যাসপোস্টের তলে আমি সৰ্যোপাসকের ন্যায় দাঁড়াইয়া থাকি, তুমি ঠিক সাড়ে-সাতটার সময় একটি প্রজবলিত কেরোসিন-ল্যাম্প লইয়া প্রত্যহ নিয়মিত তোমাদের দোতলার দক্ষিণদিকের ঘরের কাঁচের জানলাটির সম্মুখে স্থাপন কর; সেই সময় মহতীকালের জন্য তোমার দীপালোকিত প্রতিমাখানি আমার দস্টিপথে উদ্ভাসিত হইয়া উঠে, তোমার সম্বন্ধে আমার এই একটিমাত্র অপরাধ। ইতিমধ্যে ঘটনাক্ৰমে তোমার স্বামীর সহিত আমার আলাপ এবং কুমে ঘনিষ্ঠতাও হইয়াছে। তাঁহার চরিত্র যেরপে দেখিলাম তাহাতে বঝিতে বাকি নাই যে, তোমার জীবন সখের নহে। তোমার প্রতি আমার কোনোপ্রকার সামাজিক অধিকার নাই কিন্তু যে বিধাতা তোমার দুঃখকে আমার দুঃখে পরিণত করিয়াছেন, তিনিই সে দুঃখ মোচনের চেষ্টা-ভার আমার উপরেই পথাপন করিয়াছেন । অতএব আমার পধা মাপ করিয়া শক্রবার সন্ধ্যাবেলায় ঠিক সাতটার সময় গোপনে পালকি করিয়া একবার বিশ মিনিটের জন্য আমার বাসায় আসিলে আমি তোমাকে তোমার স্বামী সম্বন্ধে কতকগুলি গোপনকথা বলিতে চাহি, যদি বিশ্বাস না কর এবং যদি সহ্য করিতে পার তবে তৎসম্বন্ধে প্রমাণও দেখাইতে পারি, এবং সেই সঙ্গে কতকগুলি পরামর্শ দিতেও ইচ্ছা করি; আমি ভগবানকে অন্তরে রাখিয়া আশা করিতেছি, সেই পরামর্শমতে চলিলে তুমি একদিন সখী হইতে পারবে। আমার উদ্দেশ্য সম্পণে নিঃসবাথ নহে; ক্ষণকালের জন্য তোমাকে সম্মুখে দেখিব, তোমার কথা শুনিব এবং তোমার চরণতলপশে আমার গহখানিকে চিরকালের জন্য সখস্বপ্নমণ্ডিত করিয়া তুলিব, এ আকাঙ্ক্ষাও আমার অন্তরে আছে। যদি আমাকে বিশ্বাস না কর এবং যদি এ সখে হইতেও আমাকে বঞ্চিত করিতে চাও, তবে সে কথা আমাকে লিখিয়ো, আমি তদত্তরে পল্লযোগেই সকল কথা জানাইব। যদি চিঠি লিখিবার বিশ্বাসও না থাকে তবে আমার এই পত্ৰখানি তোমার স্বামীকে দেখাইয়ো, তাহার পরে আমার বাহা বক্তব্য তাহা তাঁহাকেই বলিব । নিতাশভোকাঙ্ক্ষী শ্ৰীমন্মথনাথ মজুমদার আষাঢ় ১৩o৫