পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ළුතු by গল্পগুচ্ছ মনে অত্যন্ত সংকুচিত হইয়া উঠিলাম কিন্তু মুখ ফুটিয়া কিছু বলিবার পবেই কিরণ ঘর হইতে বাহির হইয়া গেলেন। আমার মনে হইল, যেন কৈলাসে সনাতন ভোলানাথ তাঁহার কন্যা স্বয়ং লক্ষয়ীকে অতিথির জন্য এক পেয়ালা চা আনিতে বলিলেন; অতিথির পক্ষে সে নিশ্চয়ই অমিশ্র অমত হইবে, কিন্তু তব, কাছাকাছি নন্দীভূগী কোনো বেটাই কি হাজির ছিল না! চতুথ পরিচ্ছেদ ভবনাথবাবর বাড়ি আমি এখন নিত্য অতিথি। পবে চা জিনিসটাকে অত্যন্ত ডরাইতাম, এক্ষণে সকালে বিকালে চা খাইয়া খাইয়া আমার চায়ের নেশা ধরিয়া গেল। আমাদের বি-এ পরীক্ষার জন্য জমানপণ্ডিত-বিরচিত দশনশাস্ত্রের নব্য ইতিহাস আমি সদ্য পাঠ করিয়া আসিয়াছিলাম, তদুপলক্ষে ভবনাথবাবরে সহিত কেবল দশনআলোচনার জন্যই আসিতাম কিছুদিন এইপ্রকার ভান করিলাম। তিনি হ্যামিলটন প্রভৃতি কতকগুলি সেকাল-প্রচলিত ভ্রান্ত পুথি লইয়া এখনও নিযুক্ত রহিয়াছেন ইহাতে তাঁহাকে আমি কৃপাপাত্ৰ মনে করিতাম, এবং আমার নতন বিদ্যা অত্যন্ত আড়ম্ববরের সহিত জাহির করিতে ছাড়িতাম না। ভবনাথবাব এমনি ভালোমানষে, এমনি সকল বিষয়ে সসংকোচ যে, আমার মতো অল্পবয়স্ক যুবকের মুখ হইতেও সকল কথা মানিয়া যাইতেন, তিলমাত্র প্রতিবাদ করিতে হইলে অস্থির হইয়া উঠিতেন, ভয় করিতেন পাছে আমি কিছুতে ক্ষম হই। কিরণ আমাদের এই-সকল তত্ত্বালোচনার মাঝখান হইতেই কোনো ছাতায় উঠিয়া চলিয়া যাইত। তাহাতে আমার যেমন ক্ষোভ জন্মিত তেমনি আমি গব’ও অনুভব করিতাম। আমাদের আলোচ্য বিষয়ের দরেহ পাণ্ডিত্য কিরণের পক্ষে দুঃসহ ; সে যখন মনে-মনে আমার বিদ্যাপবীতের পরিমাপ করিত তখন তাহাকে কত উচ্চেই চাহিতে হইত। কিরণকে যখন দরে হইতে দেখিতাম তখন তাহাকে শকুন্তলা দময়ন্তী প্রভৃতি বিচিত্র নামে এবং বিচিত্র ভাবে জ্ঞানিতাম, এখন ঘরের মধ্যে তাহাকে কিরণ বলিয়া জানিলাম। এখন আব সে জগতের বিচিত্র নায়িকার ছায়ারপিণী নহে, এখন সে একমাত্র কিরণ। এখন সে শতশতাব্দীর কাব্যলোক হইতে অবতীর্ণ হইয়া অনন্তকালের যবেকচিত্তের বনসবগ পরিহার করিয়া একটি নিদিষ্ট বাঙালিঘরের মধ্যে কুমারীকনারপে বিরাজ করিতেছে। সে আমারই মাতৃভাষায় আমার সঙ্গে অত্যন্ত সাধারণ ঘরের কথা বলিয়া থাকে, সামান্য কথায় সরলভাবে হাসিয়া উঠে, সে আমাদেরই ঘরের মেয়ের মতো দুই হাতে দুটি সোনার বালা পরিয়া থাকে, গলার হারটি বেশি কিছর নয় কিন্তু বড়ো সমিষ্ট— শাড়ির প্রান্তটি কখনও কবরীর উপরিভাগ বকিয়া বেষ্টন করিয়া আসে কখনও বা পিতৃগহের অনভ্যাসবশত চ্যুত হইয়া পড়িয়া যায়, ইহা আমার কাছে বড়ো আনন্দের। সে যে অকাল্পনিক, সে যে সত্য, সে যে কিরণ, সে যে তাহা ব্যতীত নহে এবং তাহার অধিক নহে, এবং যদিচ সে আমার নহে তবুও সে যে আমাদের, সেজন্য আমার অন্তঃকরণ সবাদাই তাহার প্রতি উচ্ছসিত কৃতজ্ঞতারসে অভিষিক্ত হইতে থাকে। একদিন জ্ঞানমাত্রেরই আপেক্ষিকতা লইয়া ভযনাথবাবরে নিকট অত্যন্ত উৎসাহ