পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○bミ গল্পগুচ্ছ একটি উজৰল রক্তচিহ্ন অকিয়া দিয়াছে, সেই মায়াগণ্ডির মোহমন্ত্রে কবিতাটি আজ তাহারই, এবং সেই সঙ্গে আমারও। আমি পলকোচ্ছসিত চিত্তকে সম্বরণ করিয়া সহজ সরে কহিলাম, "কী পড়িতেছেন।” পালভরা নৌকা যেন হঠাৎ চড়ায় ঠেকিয়া গেল। কিরণ চমকিয়া উঠিয়া তাড়াতাড়ি বইখানা বন্ধ করিয়া একেবারে অচিলের মধ্যে ঢাকিয়া ফেলিল। আমি হাসিয়া কহিলাম, “বইখানা একবার দেখিতে পারি ?" কিরণকে কী যেন বাজিল, সে আগ্রহসহকারে বলিয়া উঠিল, “না না, ও বই থাক।” আমি কিয়দদরে একটা ধাপ নীচে বসিয়া ইংরাজি কাব্যসাহিত্যের কথা উত্থাপন করিলাম, এমন করিয়া কথা তুলিলাম যাহাতে কিরণেরও সাহিত্যশিক্ষা হয় এবং আমারও মনের কথা ইংরাজ কবির জবানিতে ব্যন্ত হইয়া উঠে । খররৌদ্রতাপে সুগভীর নিস্তব্ধতার মধ্যে জলের পথলের ছোটো ছোটো কলশব্দগুলি জননীর ঘুমপাড়ানিগানের মতো অতিশয় মদ এবং সকরণ হইয়া আসিল । কিরণ যেন অধীর হইয়া উঠিল; কহিল, “বাবা একা বসিয়া আছেন, অনন্ত আকাশ সম্ভবন্ধে আপনাদের সে তকটা শেষ করিবেন না ?” আমি মনে-মনে ভাবিলম, অনন্ত আকাশ তো চিরকাল থাকিবে এবং তাহার সম্বন্ধে তকও তো কোনোকালে শেষ হইবে না, কিন্তু জীবন বলপ এবং শুভ অবসর দলভ ও ক্ষণপথায়ী। কিরণের কথার উত্তর না দিয়া কহিলাম, “আমার কতকগুলি কবিতা আছে, আপনাকে শনাইব ।” কিরণ কহিল, “কাল শুনিব।" বলিয়া একেবারে উঠিয়া ঘরের দিকে চাহিয়া বলিয়া উঠিল, “বাবা, মহীন্দ্রবাব আসিয়াছেন।” ভরনাথবাব নিদ্রাভঙ্গে বালকের নদয তাঁহার সরল নেত্ৰবয় উন্মীলন করিয়া ব্যস্ত হইয়া উঠিলেন। আমার বক্ষে যেন ধক করিয়া একটা মস্ত ঘা লাগিল। ভবনাথবাবরে ঘরে গিয়া অনন্ত আকাশ সম্বন্ধে তক’ করিতে লাগিলাম। কিরণ বই হাতে লইয়া দোতলায় বোধ হয় তাহার নিজন শয়নকক্ষে নিবিঘে পড়িতে গেল। পরদিন সকালের ডাকে লাল পেন্সিলের দাগ-দেওয়া একখান স্টেটসম্যান কাগজ পাওয়া গেল, তাহাতে বি-এ পরীক্ষার ফল বাহির হইয়াছে । প্রথমেই প্রথম-ড়িবিশান কোঠায় কিরণবালা বন্দ্যোপাধ্যায় বলিয়া একটা নাম চোখে পড়িল ; আমার নিজের নাম প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় কোনো বিভাগেই নাই। পরীক্ষায় অকৃতাৰ্থ হইবার বেদনার সঙ্গে সঙ্গে বজ্ঞানির ল্যায় একটা সন্দেহ বাজিতে লাগিল যে, কিরণবালা বন্দোপাধ্যায় হয়তো আমাদেরই কিরণবালা। সে যে কালেজে পড়িয়াছে বা পরীক্ষা দিয়াছে, এ কথা যদিও আমাকে বলে নাই তথাপি সন্দেহ কমেই প্রবল হইতে লাগিল। কারণ, ভাবিয়া দেখিলাম, বন্ধ পিতা এবং তাঁহার কনাটি নিজেদের সবন্ধে কোনো কথাই কখনও আলাপ করেন নাই, এবং আমিও নিজের আখ্যান বলিতে এবং নিজের বিদ্যা প্রচার করিতে সব দাই এমন নিযন্তে ছিলাম সে তাঁহাদের কথা ভালো করিয়া জিজ্ঞাসাও করি নাই । আমার মনে পড়িতে লাগিল, এবং মনে পড়িল, আমি একদিন কিরণকে বলিয়াছিলাম, আপনাকে যদি আমি কিছুদিন গুটিকতক বই পড়াইবার সংযোগ পাই তাহা হইলে