পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8○8 গল্পগুচ্ছ ফেল লেজা এবং মড়া, রাহ এবং কেতু, পরস্পরের সঙ্গে আড়াআড়ি করিলে যেমন দেখিতে হইত এও ঠিক সেইরকম। প্রাচীন হালদার-বংশ দুই খণ্ডে পৃথক হইয়া প্রকাণ্ড বসত-বাড়ির মাঝখানে এক ভিত্তি তুলিয়া পরপর পিঠাপিঠি করিয়া বসিয়া আছে; কেহ কাহারও মাখদশন করে না। নবগোপালের ছেলে নলিন এবং ননীগোপালের ছেলে নন্দ একবংশজাত, একবয়সি, এক ইস্কুলে যায় এবং পারিবারিক বিদ্বেষ ও রেষারেষিতেও উভয়ের মধ্যে সম্পন্ণ ঐক্য। নলিনের বাপ নবগোপাল অত্যন্ত কড়া লোক। ছেলেকে হপি ছাড়িতে দিতেন না, পড়াশনা ছাড়া আর কথা ছিল না। খেলা খাদ্য ও সাজসজা সম্বন্ধে ছেলের সব প্রকার শখ তিনি খাতাপত্র ও ইস্কুল-বইয়ের নীচে চাপিয়া রাখিয়াছিলেন। নন্দর বাপ ননীগোপালের শাসনপ্রণালী অত্যন্ত শিথিল ছিল। মা তাহাকে অত্যন্ত ফিটফাট করিয়া সাজাইয়া ইস্কুলে পাঠাইতেন, আনা-তিনেক জলপানিও সঙ্গে দিতেন ; নন্দ ভাজা মসলা ও কুলপির বরফ, লাঠিম ও মাবলগালিকা ইচ্ছামত ভোগবিতরণের দ্বারা যশস্বী হইয়া উঠিয়াছিল। বাবা হইত এবং আমার বাবা যদি নন্দর পিতৃস্থান অধিকার করিত, তাহা হইলে নন্দকে মজা দেখাইয়া দিতাম । কিন্তু, সেরাপ সংযোগ ঘটিবার পবে ইতিমধ্যে নন্দ বৎসরে বৎসরে প্রাইজ পাইতে লাগিল; নলিন রিক্তহস্তে বাড়ি আসিয়া ইস্কুলের কতৃপক্ষদের নামে পক্ষপাতের অপবাদ দিতে লাগিল। বাপ তাহাকে অন্য ইস্কুলে দিলেন, বাড়িতে অন্য মাস্টার রাখিলেন, ঘামের সময় হইতে একঘণ্টা কাটিয়া পড়ার সময়ে যোগ করিলেন, কিন্তু ফলের তারতম্য হইল না । নন্দ পাস করিতে করিতে বি-এ উত্তীণ হইয়া গেল, নলিন ফেল করিতে করিতে এনট্রান্স-ক্লাসে জাতিকলের ইন্দরের মতো আটকা श्रऊिना व्रश्किल । এমনসময় তাহার পিতা তাহার প্রতি দয়া করিলেন। তিনি মরিলেন। তিন বৎসর মেয়াদ খাটিয়া এনট্রান্স-ক্লাস হইতে তাহার মুক্তি হইল এবং স্বাধীন নলিন আংটি, দিবার চেষ্টা করিতে লাগিল। এনট্রান্স-ফেলের জড়ি চৌম্বাড়ি, বি-এ-পাসের একঘোড়ার গাড়িকে অনায়াসে ছাড়াইয়া যাইতে লাগিল: বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি ওয়েলারঘোড়ার সহিত সমান চালে চলিতে পারিল না। এ দিকে নলিন এবং নন্দর বিবাহের জন্য পারীর সন্ধান চলিতেছে। নলিনের প্রতিজ্ঞা, সে এমন কন্যা বিবাহ করিবে যাহার উপমা মেলা ভার, তাহার জড়ি এবং তাহার স্মীর কাছে নন্দকে হার মানিতেই হইবে। সবচেয়ে ভালোর জন্য যাহার আকাঙ্ক্ষা, অনেক ভালো তাহাকে পরিত্যাগ করিতে হয়। কাছাকাছি কোনো মেয়েকেই নলিন পছন্দ করিয়া খতম করিতে সাহস করিল না,