পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ළු N. গল্পগুচ্ছ ঝগড়া বাধাইলেন। বরের পিতা বলিলেন, “তোমার কন্যার সহিত আমার পত্রের যদি বিবাহ দিই তবে—” ইত্যাদি ইত্যাদি। কন্যার পিতা আরও একগণ অধিক করিয়া বলিলেন, “তোমার পত্রের সহিত আমার কন্যার যদি বিবাহ দিই তবে—” ইত্যাদি ইত্যাদি। অতঃপর আর বিলবমাত্র না করিয়া নলিন নন্দকে ফাঁকি দিয়া শভেলপেন শুভবিবাহ সত্বর সম্পন্ন করিয়া ফেলিল। এবং হাসিতে হাসিতে হাজরাকে বলিল, "বি-এ পাস করা তো একেই বলে। কী বলো হে হাজরা! এবারে আমাদের ও বাড়ির বড়োবাব ফেল ।” অনতিকাল পরেই নবগোপালের বাড়িতে একদিন ঢাক ঢোল সানাই বাজিয়া উঠিল। নন্দর গায়ে-হলদে। নলিন কহিল, "ওহে হাজরা, খবর লও তো পাত্রীটি কে।” হাজরা আসিয়া খবর দিল, পাত্ৰীটি সেই রাওলপিণ্ডির মেয়ে। রাওলপিন্ডির মেয়ে! হাঃ হাঃ হাঃ । নলিন অত্যন্ত হাসিতে লাগিল। ও বাড়ির বড়োবাব আর কন্যা পাইলেন না, আমাদেরই পরিত্যক্ত পাত্রীটিকে বিবাহ করিতেছেন। হাজরাও বিস্তর হাসিল । কিন্তু, উত্তরোত্তর নলিনের হাসির আর জোর রহিল না। তাহার হাসির মধ্যে কীট প্রবেশ করিল। একটি ক্ষুদ্র সংশয় তীক্ষ বরে কানে কানে বলিতে লাগিল, “আহা, হাতছাড়া হইয়া গেল। শেষকালে নন্দর কপালে জটিল!” ক্ষুদ্র সংশয় ক্রমশই রক্তসফীত জোঁকের মতো বড়ো হইয়া উঠিল, তাহার কন্ঠস্বরও মোটা হইল। সে বলিল, “এখন আর কোনোমতেই ইহাকে পাওয়া যাইবে না, কিন্তু আসলে ইহাকেই দেখিতে ভালো। ভারি ঠকিয়াছ।” অন্তঃপারে নলিন যখন খাইতে গেল তখন তাহার সীর ছোটোখাটো সমস্ত খাত মস্ত হইয়া তাহাকে উপহাস করিতে লাগিল। মনে হইতে লাগিল, সত্ৰীটা তাহাকে ভয়ানক ঠকাইয়াছে। রাওলপিন্ডিতে যখন সম্ববন্ধ হইতেছিল তখন নলিন সেই কন্যার যে ফোটো পাইয়াছিল সেইখানি বাহির করিয়া দেখিতে লাগিল। "বাহবা, অপরপে রপমাধরী। এমন লক্ষয়ীকে হাতে পাইয়া ঠেলিয়াছি, আমি এতবড়ো গাধা।” বিবাহসন্ধ্যায় আলো জালাইয়া বাজনা বাজাইয়া জড়িতে চড়িয়া বর বাহির হইল। নলিন শইয়া পড়িয়া গড়গড়ি হইতে যৎসামান্য সানা আকর্ষণের নিম্ফল চেষ্টা করিতেছে এমনসময় হাজরা প্রসন্নবদনে হাসিতে হাসিতে আসিয়া নন্দকে লক্ষ্য করিয়া পরিহাস জমাইবার উপক্লম করিল। নলিন হকিল, “দরোয়ান!” হাজরা তটস্থ হইয়া দরোয়ানকে ডাকিয়া দিল। বাব হাজরাকে দেখাইয়া দিয়া কহিল, "অবহি ইকো কান পকড়কে বাহার নিকাল দো।” আশ্বিন ১৩০৭