পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

೪೬೫ গল্পগুচ্ছ লিখিতেছে। অমল কখন নিঃশব্দপদে পশ্চাতে আসিয়া দাঁড়াইল তাহা সে জানিতে পারিল না। বাদলার স্নিগ্ধ আলোকে চার লিখিয়া গেল, অমল পড়িতে লাগিল। পাশে অমলেরই দই-একটা ছাপানো লেখা খোলা পড়িয়া আছে; চারার কাছে সেইগুলিই রচনার একমাত্র আদশ । “তবে যে বল, তুমি লিখতে পার না !" হঠাৎ অমলের কণ্ঠ শনিয়া চার অত্যন্ত চমকিয়া উঠিল; তাড়াতাড়ি খাতা লকাইয়া ফেলিল; কহিল, “তোমার ভারি অন্যায়।” অমল। কী অন্যায় করেছি। চার্য। নাকিয়ে নাকিয়ে দেখছিলে কেন। অমল। প্রকাশ্যে দেখতে পাই নে বলে । চার তাহার লেখা ছিড়িয়া ফেলিবার উপক্ৰম করিল। অমল ফস করিয়া তাহার হাত হইতে খাতা কাড়িয়া লইল। চার কহিল, “তুমি যদি পড় তোমার সঙ্গে জন্মের মতো আড়ি ।” অমল। যদি পড়তে বারণ কর তা হলে তোমার সঙ্গে জন্মের মতো আড়ি । চার। আমার মাথা খাও, ঠাকুরপো, পোড়ো না। অবশেষে চারকেই হার মানিতে হইল। কারণ, অমলকে তাহার লেখা দেখাইবার জন্য মন ছটফট করিতেছিল, অথচ দেখাইবার বেলায় যে তাহার এত লঙ্গা করিবে তাহা সে ভাবে নাই। অমল যখন অনেক অননয় করিয়া পড়িতে আরম্ভ করিল তখন লঙ্গজায় চারীর হাত-পা বরফের মতো হিম হইয়া গেল। কহিল, “আমি পান নিয়ে আসি গে।” বলিয়া তাড়াতাড়ি পাশের ঘরে পান সাজিবার উপলক্ষ করিয়া চলিয়া গেল । অমল পড়া সাঙ্গ করিয়া চারকে গিযা কহিল, “চমৎকার হয়েছে।” চার পানে খয়ের দিতে ভুলিয়া কহিল, “যাও । আর ঠাট্টা করতে হবে না। দাও, আমার খাতা দাও।” অমল কহিল, “খাতা এখন দেল না, লেখাটা কপি করে নিয়ে কাগজে পাঠাব।” চার হাঁ, কাগজে পাঠাবে বইকি ! সে হবে না। চার ভারি গোলমাল করিতে লাগিল। অমলও কিছতে ছাড়িল না। সে যখন বারবার শপথ করিয়া কহিল “কাগজে দিবার উপযন্ত হইযাছে।” তখন চার যেন নিতান্ত হতাশ হইয়া কহিল, “তোমার সঙ্গে তো পেরে ওঠবার জো নেই! যেটা ধরবে সে আর কিছুতেই ছাড়বে না!” অমল কহিল, “দাদাকে একবার দেখাতে হবে।” শনিয়া চার পান সাজা ফেলিয়া আসন হইতে বেগে উঠিয়া পড়িল; খাতা কাড়িবার চেষ্টা করিয়া কহিল, “না, তাঁকে শোনাতে পাবে না। তাঁকে যদি আমার লেখার কথা বল তা হলে আমি আর এক অক্ষর লিখব না।” অমল। বউঠান, তুমি ভারি ভুল বঝছ। দাদা মাখে যাই বলন, তোমার লেখা দেখলে খাব খুশি হবেন। চার। তা হোক, আমার খাঁশিতে কাজ নেই।