পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নষ্টনীড় 886; যাই হোক, বেচারা দাদার জন্যে আমি ভাবি। তিনি কখন খেলেন, না খেলেন, মন্দা তার কোনো খোঁজও রাখে না, অথচ অমলের পান থেকে চুন খসে গেলেই চাকরবাকরদের সঙ্গে বকাবাঁক করে অনর্থ করে। ভূপতি। তোমরা মেয়েরা কিন্তু ভারি সন্দিগধ, তা বলতে হয়। চার রাগিয়া বলিল, “আচ্ছা বেশ, আমরা সন্দিগধ, কিন্তু বাড়িতে আমি এ-সমস্ত বেহায়াপনা হতে দেব না তা বলে রাখছি।” চারার এই-সমস্ত অমলেক আশঙ্কার ভূপতি মনে-মনে হাসিল, খশিও হইল। গহ যাহাতে পবিত্র থাকে, দাম্পত্যধমে আনুমানিক কাল্পনিক কলঙ্কও লেশমাত্র পশ না করে, এজন্য সাধনী সীদের যে অতিরিক্ত সতকতা, যে সন্দেহাকুল দটিক্ষেপ, তাহার মধ্যে একটি মাধবে এবং মহত্ত্ব আছে। ভূপতি শ্রদ্ধার এবং স্নেহে চারার ললাট চুম্বন করিয়া কহিল, “এ নিয়ে আর কোনো গোল করবার দরকার হবে না। উমাপদ ময়মনসিংহে প্র্যাকটিস করতে যাচ্ছে, মন্দাকেও সঙ্গে নিয়ে যাবে।” অবশেষে নিজের দুশ্চিন্তা এবং এই-সকল অপ্রীতিকর আলোচনা দরে করিয়া দিবার জন্য ভূপতি টেবিল হইতে একটা খাতা তুলিয়া লইয়া কহিল, “তোমার লেখা আমাকে শোনাও না, চার্য।” চার খাতা কাড়িয়া লইয়া কহিল, “এ তোমার ভালো লাগবে না, তুমি ঠাট্টা করবে ।” ভূপতি এই কথায় কিছু ব্যথা পাইল, কিন্তু তাহা গোপন করিয়া হাসিয়া কহিল, “আচ্ছা, আমি ঠাট্টা করব না, এমনি স্থির হয়ে শািনব যে তোমার ভ্রম হবে, আমি ঘামিয়ে পড়েছি।” কিন্তু ভূপতি আমল পাইল না— দেখিতে দেখিতে খাতাপত্র নানা আবরণআচ্ছাদনের মধ্যে অন্তহিত হইয়া গেল । নবম পরিচ্ছেদ সকল কথা ভূপতি চারকে বলিতে পারে নাই। উমাপদ ভূপতির কাগজখানির কমাধ্যক্ষ ছিল। চাঁদা-আদায়, ছাপাখানা ও বাজারের দেনা শোধ, চাকরদের বেতন দেওয়া, এসমস্তই উমাপদর উপর ভার ছিল। ইতিমধ্যে হঠাৎ একদিন কাগজওয়ালার নিকট হইতে উকিলের চিঠি পাইয়া ভূপতি আশ্চৰ্য হইয়া গেল। ভূপতির নিকট হইতে তাহাদের ২৭oo, টাকা পাওনা জানাইয়াছে। ভূপতি উমাপদকে ডাকিয়া কহিল, “এ কী ব্যাপার! এ টাকা তো আমি তোমাকে দিয়ে দিয়েছি। কাগজের দেনা চার-পাঁচশোর বেশি তো হবার কথা নয়।” উমাপদ কহিল, “নিশ্চয় এরা ভুল করেছে - কিন্তু, আর চাপা রহিল না। কিছুকাল হইতে উমাপদ এইরুপ ফাঁক দিয়া আসিতেছে। কেবল কাগজ সম্পবন্ধে নহে, ভূপতির নামে উমাপদ বাজারে অনেক দেনা করিয়াছে। গ্রামে সে যে একটি পাকা বাড়ি নিমাণ করিতেছে তাহার মালমসলার কতক ভূপতির নামে লিখাইয়াছে, অধিকাংশই কাগজের টাকা হইতে শোধ করিয়াছে।