পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8c や গল্পগুচ্ছ J যখন নিতান্তই ধরা পড়িল তখন সে রক্ষ স্বরে কহিল, “আমি তো আর নিরদেশ হচ্ছি নে। কাজ করে আমি ক্ৰমে ক্ৰমে শোধ দেব—তোমার সিকি-পয়সার দেনা যদি বাকি থাকে তবে আমার নাম উমাপদ নয়।" তাহার নামের ব্যত্যয়ে ভূপতির কোনো সাত্বনা ছিল না। অথের ক্ষতিতে ভূপতি তত ক্ষম হয় নাই, কিন্তু অকস্মাৎ এই বিশ্বাসঘাতকতায় সে যেন ঘর হইতে শন্যের মধ্যে পা ফেলিল । সেইদিন সে অকালে অন্তঃপরে গিয়াছিল। পথিবীতে একটা যে নিশ্চয় বিশ্বাসের পথান আছে সেইটে ক্ষণকালের জন্য অনুভব করিয়া আসিতে তাহার হদয় ব্যাকুল হইয়াছিল। চার তখন নিজের দঃখে সন্ধ্যাদীপ নিবাইয়া জানলার কাছে অন্ধকারে বসিয়া ছিল। উমাপদ পরদিনেই ময়মনসিংহে যাইতে প্রস্তুত। বাজারের পাওনাদাররা খবর পাইবার পবেই সে সরিয়া পড়িতে চায়। ভূপতি ঘণাপবেক উমাপদর সহিত কথা কহিল না— ভূপতির সেই মৌনাবস্থা উমাপদ সৌভাগ্য বলিয়া জ্ঞান করিল। অমল আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “মন্দা বোঠান, এ কী ব্যাপার। জিনিসপত্র গোছাবার ধম যে ?” মন্দা। আর ভাই, ষেতে তো হবেই। চিরকাল কি থাকব। অমল। যাচ্ছ কোথায় । মন্দা । দেশে । অমল। কেন। এখানে অসুবিধাটা কী হল। মন্দা। অসুবিধে আমার কী বল। তোমাদের পাঁচজনের সঙ্গে ছিলাম, সুখেই ছিলাম। কিন্তু অন্যের অসুবিধে হতে লাগল যে – বলিয়া চারীর ঘরের দিকে কটাক্ষ করিল। অমল গভীর হইয়া চুপ করিয়া রহিল। মন্দা কহিল, “ছি ছি, কী লন্জা। বাব কী মনে করলেন।” অমল এ কথা লইয়া আর অধিক আলোচনা করিল না। এটুকু স্থির করিল, চার তাহাদের সম্বন্ধে দাদার কাছে এমন কথা বলিয়াছে যাহা বলিবার নহে। অমল বাড়ি হইতে বাহির হইয়া রাস্তায বেড়াইতে লাগিল। তাহার ইচ্ছা হইল এ বাড়িতে আর ফিরিয়া না আসে। দাদা যদি বোঠানের কথায় বিশ্ববাস করিয়া তাহাকে অপরাধী মনে করিয়া থাকেন তবে মন্দা সে পথে গিয়াছে তাহাকেও সেই পথে যাইতে হয়। মন্দাকে বিদায় এক হিসাবে অমলের প্রতিও নিবাসনের আদেশ– সেটা কেবল মুখ ফুটিয়া বলা হয় নাই মাত্র। ইহার পরে কতব্য থলে সপেস্ট— আর একদণ্ডও এখানে থাকা নয়। কিন্তু দাদা যে তাহার সবন্ধে কোনোপ্রকার অন্যার ধারণা মনেমনে পোষণ করিয়া রাখবেন সে হইতেই পারে না। এতদিন তিনি অক্ষয় বিশ্বাসে তাহাকে ঘরে পথান দিয়া পালন করিয়া আসিতেছেন, সে বিশ্বাসে যে অমল কোনো অংশে আঘাত দেয় নাই সে কথা দাদাকে না বঝোইয়া সে কেমন করিয়া যাইবে । ভূপতি তখন আত্মীয়ের কৃতঘাতা, পাওনাদারের তাড়না, উচ্ছঙ্খল হিসাবপত্র এবং শন্য তহবিল লইয়া মাথায় হাত দিয়া ভাবিতেছিল। তাহার এই শতক মনোদঃখের কেহ দোসর ছিল না—চিত্তবেদনা এবং ঋণের সঙ্গে একলা দাঁড়াইয়া যাদ্ধ করিবার