পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ලb* গল্পগুচ্ছ আমাদের মতের অনেক ঐকাই লক্ষিত হয়।” কথাটা যদি সত্য হইত তাহা হইলে মোটের উপর গ্রন্থখানি পড়াইয়া ফেলা উচিত ছিল। দেশের যেখানে যত লাইব্রেরি ছিল এবং ছিল না তাহার সম্পাদকগণ মদ্রোর পরিবতে মদ্রাঙ্কিত পত্রে তারাপ্রসনের গ্রন্থ ভিক্ষা চাহিয়া পাঠাইলেন। অনেকেই লিখিল, আপনার এই চিন্তাশীল গ্রন্থে দেশের একটি মহৎ অভাব দর হইয়াছে।’ চিন্তাশীল গ্রন্থ কাহাকে বলে, তারাপ্রসন্ন ঠিক বুঝিতে পারিলেন না, কিন্তু পলকিতচিত্তে ঘর হইতে মাসলে দিয়া প্রত্যেক লাইব্রেরিতে বেদান্তপ্রভাকর পাঠাইয়া দিলেন। এইরপে অজস্র স্তুতিবাক্যে তারাপ্রসন্ন যখন অতিমাত্র উৎফুল্ল হইয়া উঠিয়াছেন, এমন সময়ে পত্র পাইলেন, দাক্ষায়ণীর পঞ্চমসন্তান-সম্ভাবনা অতি নিকটবতী হইয়াছে। তখন রক্ষকটিকে সঙ্গে করিয়া অথ্যসংগ্রহের জন্য দোকানে গিয়া উপস্থিত হইলেন। সকল দোকানদার একবাক্যে বলিল, একখানি বইও বিক্ৰয হয় নাই। কেবল এক জায়গায় শুনিলেন, মফস্বল হইতে কে-একজন তাঁহাব এক বই চাহিয়া পাঠাইয়াছিল এবং তাহাকে ভ্যালপেবেলে পাঠানোও হইয়াছিল, কিন্তু বই ফেবত আসিয়াছে, কেহ গ্রহণ করে নাই। দোকানদারকে তাহার মাসলে দণ্ড দিতে হইয়াছে, সেইজন্য সে বিষম আক্লোশে গ্রন্থকারের সমসত বহি তখনই তাঁহাকে প্রত্যপণ কবিতে উদ্যত হইল । গ্রন্থকার বাসায় ফিরিয়া আসিয়া অনেক ভাবিলেন কিন্তু কিছুই বুঝিযা উঠিতে পারিলেন না। তাঁহার চিন্তাশীল গ্রন্থ সম্বন্ধে যতই চিন্তা করলেন ততই অধিকতর উদবিগ্ন হইয়া উঠিতে লাগিলেন। অবশেষে যে কয়েকটি টাকা অবশিষ্ট ছিল তাহাই অবলম্বন করিয়া অবিলবে গৃহাভিমুখে যাত্রা করিলেন। তারাপ্রসন্ন গহিণীর নিকট আসিয়া অত্যন্ত আড়ম্বরের সহিত প্রফুল্লতা প্রকাশ করিলেন। দাক্ষায়ণী শুভ সংবাদের জন্য সহস্যমুখে প্রতীক্ষা করিয়া রহিলেন । তখন তারাপ্রসন্ন একখানি গোঁড়বাতাবহ আনিয়া গাহিণীল কোড়ে মেলিয়া দিলেন। পাঠ করিয়া তিনি মনে মনে সম্পাদকেব অক্ষয় ধনপ.া কামনা করিলেন, এবং তাঁহার লেখনীর মুখে মানসিক পক্ষেপচন্দন-অঘ্য উপহার দিলেন । পাঠ সমাপন করিয়া আবার স্বামীর মুখের দিকে চাহিলেন। দাক্ষায়ণী আবার স্বামীর মুখের প্রতি প্রত্যাশাপািণ সিনগধনের উত্থাপিত করিলেন। তখন তারাপ্রসন্ন একখণ্ড যুগান্তর’ বাহির করিলেন। তাহার পর ? তাহার পর “ভারতভাগ্যচক্ৰ'। তাহার পর ? তাহার পর শভেজাগরণ । তাহার পর 'অরণালোক । তাহার পর সংবাদতরঙ্গভঙ্গ’। তাহার পর- আশা, আগমনী, উচ্ছাস, পাপমঞ্জরী, সহচরী, সীতা-গেজেট, অহল্যালাইব্রেরি-প্রকাশিকা, ললিত-সমাচার, কোটাল, বিশ্ববিচারক, লাবণ্যলতিকা। হাসিতে হাসিতে গহিণীর আনন্দাশ্র পড়িতে লাগিল। চোখ মছিয়া আর-একবার স্বামীর কীতিরমিসমাজল মুখের দিকে চাহিলেন: স্বামী বলিলেন, “এখনও অনেক কাগজ বাকি আছে।” দাক্ষায়ণী বলিলেন, “সে বিকালে দেখিব, এখন অন্য খবর কী বলো।” তারাপ্রসন্ন বলিলেন, “এবার কলিকাতায় গিয়া শনিয়া আসিলাম, লাটসাহেবের