পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

नष्प्लेनौफ़ 8ba যে সন্ধ্যাবেলাকে ভূপতি হাস্যে কৌতুকে প্রণয়ে আদরে রমণীয় করিয়া তুলিবে কল্পনা করিয়াছিল সেই সন্ধ্যাবেলা কাটানো তাহাদের পক্ষে সমস্যার স্বরপে হইয়া উঠিল। কিছুক্ষণ চেষ্টাপপ মৌনের পর ভূপতি মনে করে “উঠিয়া বাই”—কিন্তু উঠিয়া গেলে চার কী মনে করিবে এই ভাবিয়া উঠিতেও পারে না। বলে, “চার, তাস খেলবে ?" চার অন্য কোনো গতি না দেখিয়া বলে, “আচ্ছা।” বলিয়া অনিচ্ছাক্ৰমে তাস পাড়িয়া আনে, নিতান্ত ভুল করিয়া অনায়াসেই হারিয়া যায়—সে খেলায় কোনো সখে থাকে না । ভূপতি অনেক ভাবিয়া একদিন চারকে জিজ্ঞাসা করিল, “চার মন্দাকে আনিয়ে নিলে হয় না ? তুমি নিতান্ত একলা পড়েছ।” চার মন্দার নাম শুনিয়াই জনলিয়া উঠিল। বলিল, “না, মন্দাকে আমার দরকার নেই।” ভূপতি হাসিল। মনে-মনে খুশি হইল। সাধনীরা যেখানে সতাঁধমের কিছমাত্র ব্যতিক্রম দেখে সেখানে ধৈয রাখিতে পারে না। বিদ্বেষের প্রথম ধাক্কা সামলাইয়া চার ভাবিল, মন্দা থাকিলে সে হয়তো ভূপতিকে অনেকটা আমোদে রাখিতে পারিবে। ভূপতি তাহার নিকট হইতে যে মনের সখে চায় সে তাহা কোনোমতে দিতে পারিতেছে না, ইহা চার অনুভব করিয়া পীড়া বোধ করিতেছিল। ভূপতি জগৎসংসারের আর-সমস্ত ছাড়িয়া একমাত্র চারর নিকট হইতেই তাহার জীবনের সমস্ত আনন্দ আকষণ করিয়া লইতে চেষ্টা করিতেছে, এই একাগ্র চেষ্টা দেখিয়া ও নিজের অন্তরের দৈন্য উপলব্ধি করিয়া চার ভীত হইয়া পড়িয়াছিল। এমন করিয়া কতদিন কিরপে চলিবে। ভূপতি আর-কিছু অবলম্বন করে না কেন। আর-একটা খবরের কাগজ চালায় না কেন। ভূপতির চিত্তরঞ্জন করিবার অভ্যাস এ পৰ্যন্ত চারকে কখনও করিতে হয় নাই; ভূপতি তাহার কাছে কোনো সেবা দাবি করে নাই, কোনো সখে প্রার্থনা করে নাই, চারকে সে সবাতোভাবে নিজের প্রয়োজনীয় করিয়া তোলে নাই; আজ হঠাৎ তাহার জীবনের সমস্ত প্রয়োজন চারর নিকট চাহিয়া বসাতে সে কোথাও কিছু যেন খাজিয়া পাইতেছে না। ভূপতির কী চাই, কী হইলে সে তৃপ্ত হয়, তাহা চার ঠিকমত জানে না এবং জানিলেও তাহা চারীর পক্ষে সহজে আয়ত্তগম্য নহে । ভূপতি যদি অলেপ অলেপ অগ্রসর হইত তবে চারর পক্ষে হয়তো এত কঠিন হইত না; কিন্তু হঠাৎ এক রাত্রে দেউলিয়া হইয়া রিক্ত ভিক্ষাপাত্র পাতিয়া বসাতে সে যেন বিব্রত হইয়াছে। চার কহিল, "আচ্ছা, মন্দাকে আনিয়ে নাও, সে থাকলে তোমার দেখাশুনোর অনেক সুবিধে হতে পারবে।” ভূপতি হাসিয়া কহিল, “আমার দেখাশুনো! কিছু দরকার নেই।” ভূপতি ক্ষম হইয়া ভাবিল, “আমি বড়ো নীরস লোক, চারকে কিছতেই আমি সখী করিতে পারিতেছি না।” * এই ভাবিয়া সে সাহিত্য লইয়া পড়িল। বন্ধরো কখনও বাড়ি আসিলে বিন্মিত হইয়া দেখিত, ভূপতি টেনিসন, বাইরন, বাঁকমের গল্প, এই সমস্ত লইয়া আছে। ভূপতির এই অকাল-কাব্যানরোগ দেখিয়া বন্ধবোধষেরা অত্যন্ত ঠাট্টা-বিপ্লপে করিতে