পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&o२ গল্পগুচ্ছ আমি কহিলাম, "রাগ করিয়া কী করিবে। দন্টাত দেখাও-না।” নিঝরিণী কহিল, “তোমার মতো যদি আমার ইতিহাস পড়া থাকিত তবে নিশ্চয়ই আমি ঢের দন্টান্ত দেখাইতে পারিতাম।” এ কথাটা শুনিয়া আমার মন একট নরম হইয়াছিল, কিন্তু তক এইখানেই শেষ হয় নাই। ইহার শেষ যেখানে সেটা পরে বণনা করা যাইতেছে। উদ্দীপনা বলিয়া মাসিক পত্রে ভালো গল্প লিখিবার জন্য পঞ্চাশ টাকা পরস্কার ঘোষণা করিয়াছিল। কথা এই স্থির হইল, আমরা দুইজনেই সেই কাগজে দটো গল্প লিখিয়া পাঠাইব, দেখি কাহার ভাগ্যে পুরস্কার জোটে। রাত্রের ঘটনা তো এই। পরদিন প্রভাতের আলোকে বন্ধি যখন নিমল হইয়া আসিল তখন বিধা জমিতে লাগিল। কিন্তু প্রতিজ্ঞা করিলাম, এ অবসর ছাড়িয়া দেওয়া হইবে না; যেমন করিয়া হউক, জিতিতেই হইবে । হাতে তখনও দুই মাস সময় ছিল। প্রকৃতিবাদ অভিধান কিনিলাম ; বঙ্কিমের বইগলোও সংগ্ৰহ করিলাম। কিন্তু বঙ্কিমের লেখা আমার চেয়ে আমার অন্তঃপরে অধিক পরিচিত, তাই সে মহদাশ্রয় পরিত্যাগ করিতে হইল। ইংরাজি গল্পের বই দেদার পড়িতে লাগিলাম। অনেকগলো গল্প ভাঙিয়া-চুরিয়া একটা প্লট দাঁড় করাইলাম। লটটা খুবই চমৎকার হইয়াছিল, কিন্তু মুশকিল এই হইল, বাংলা-সমাজে সে-সকল ঘটনা কোনো অবস্থাতেই ঘটিতে পারে না। অতিপ্রাচীনকালের পাঞ্জাবের সীমান্তদেশে গল্পের ভিত্তি ফাদিলাম ; সেখানে সম্ভব-অসম্ভবের সমস্ত বিচার একেবারে নিরাকৃত হওয়াতে কলমের মুখে কোনো বাধা রহিল না। উদ্দাম প্রণয়, অসম্ভব বীরত্ব, নিদারণে পরিণাম, সাকাসের ঘোড়ার মতো আমার গল্প ঘিরিয়া অদ্ভুত গতিতে ঘুরিতে লাগিল । রাত্রে আমার ঘমে হইত না; দিনে আহারকালে ভাতের থালা ছাড়িয়া মাছের ঝোলের বাটিতে ডাল ঢালিয়া দিতাম। আমার অবসথা দেখিয়া নিঝরিণী আমাকে অননয় করিয়া বলিল, “আমার মাথা খাও, তোমাকে আর গল্প লিখিতে হইবে না— আমি হার মানিতেছি।” আমি উত্তেজিত হইয়া বলিলাম, “তুমি কি মনে করিতেছ, আমি দিনরান্ত্রি কেবল গল্প ভাবিয়াই মরিতেছি। কিছুই না। আমাকে মক্কেলের কথা ভাবিতে হয়—তোমার মতো গল্প এবং কবিতা চিন্তা করিবার অবসর পড়িয়া থাকিলে আমার ভাবনা কণী छ्ळिल ।” যাহা হউক, ইংরাজি প্ৰলট এবং সংস্কৃত অভিধানে মিলাইয়া একটা গল্প খাড়া করিলাম। মনের কোণে ধমাবধিতে একট পীড়াবোধ করিতে লাগিলাম— ভাবিলাম, বেচারা নিঝর ইংরাজি সাহিত্য পড়ে নাই, তাহার ভাব সংগ্ৰহ করিবার ক্ষেত্র সংকীর্ণ; আমার সঙ্গে তাহার এই লড়াই নিতান্ত অসমকক্ষের লড়াই। উপসংহার লেখা পাঠানো হইয়াছে। বৈশাখের সংখ্যায় পরস্কারযোগ্য গল্পটি বাহির হইবে। যদিও আমার মনে কোনো আশঙ্কা ছিল না, তব সময় যত নিকটবতী হইল মনটা তত