পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কম-ফল (; ఇ> সকুমারী। যা বলে সে আমি জানি, সে কথা আর জিজ্ঞাসা করতে হবে না। তুমি এখন দেনাটা শোধ করে দাও। বিধ। দিদি ! সকুমারী। আর দিদি-দিদি করে কাঁদতে হবে না। চল, তোর চুল বেধে দিই গে। এমন ছিরি করে তোর ভগ্নীপতির সামনে বার হতে লজা করে না ? শশধর ব্যতীত সকলের প্রস্থান । মন্মথের প্রবেশ শশধর । মন্মথ, ভাই, তুমি একটা বিবেচনা করে দেখো— মন্মথ। বিবেচনা না করে তো আমি কিছই করি না । শশধর । তবে দোহাই তোমার, বিবেচনা একটা খাটো করো। ছেলেটকে কি দেবে। তাতে কি ওর ভালো হবে। து. মন্মথ। ভালোমন্দর কথা কেউই শেষ পর্যন্ত ভেবে উঠতে পারে না। আমি মোটামুটি এই বুঝি যে, বার বার সাবধান করে দেওয়ার পরও যদি কেউ অন্যায় করে তবে তার ফলভোগ হতে তাকে কৃত্রিম উপায়ে রক্ষা করা কারও উচিত হয় না। আমরা যদি মাঝে পড়ে ব্যথ করে না দিতেম তবে প্রকৃতির কঠিন শিক্ষায় মানষে যথার্থ মানুষ হয়ে উঠতে পারত। শশধর । প্রকৃতির কঠোর শিক্ষাই যদি একমাত্র শিক্ষা হত তবে বিধাতা বাপমায়ের মনে স্নেহটকু দিতেন না। মন্মথ, তুমি যে দিনরাত কম ফল-কম ফল কর আমি তা সম্পণে মানি না। প্রকৃতি আমাদের কাছ হতে কমফিল কড়ায় গণ্ডায় আদায় করে নিতে চায় কিন্তু প্রকৃতির উপর যিনি কত আছেন তিনি মাঝে পড়ে তার অনেকটাই মহকুপ দিয়ে থাকেন, নইলে কমফিলের দেনা শুধতে শুধতে আমাদের অস্তিত্ব পয’ত বিকিয়ে যেত। বিজ্ঞানের হিসাবে কম ফল সত্য, কিন্তু বিজ্ঞানের উপরেও বিজ্ঞান আছে, সেখানে প্রেমের হিসাবে ফলাফল সমস্ত অন্যরকম। কম ফল নৈসগিক, মাজ’নাট্য তার উপরের কথা । মন্মথ। যিনি অনৈসগিক মানুষ তিনি যা-খুশি করবেন ; আমি অতি সামান্য নৈসগিক, আমি কমফল শেষ পর্যন্তই মানি । শশধর । আচ্ছা, আমি যদি সতীশের দেনা শোধ করে তাকে খালাস করি, তুমি কী করবে। মন্মথ । আমি তাকে ত্যাগ করব । দেখো, সতীশকে আমি যে ভাবে মানুষ করতে চেয়েছিলেম প্রথম হতেই বাধা দিয়ে তোমরা তা বাথ করেছ। এক দিক হতে সংযম আর-এক দিক হতে প্রশ্রয় পেয়ে সে একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ৰমাগতই ভিক্ষা পেয়ে যদি তার সন্মানবোধ এবং দায়িত্ববোধ চলে যায়, যে কাজের যে পরিণাম তোমরা যদি মাঝে পড়ে কিছুতেই তাকে তা বঝেতে না দাও, তবে তার অাশা আমি ত্যাগ করলেম । তোমাদের মতেই তাকে মানুষ করে – দুই নৌকায় পা দিয়েই তার বিপদ ঘটেছে । শশধর । ও কী কথা বলছ, মন্মথ— তোমার ছেলে- 蠱 মন্মথ। দেখো শশধর, নিজের প্রকৃতি ও বিশ্বাস মতেই নিজের ছেলেকে আমি মানুষ করতে পারি, অন্য কোনো উপায় তো জানি না। যখন নিশ্চয় দেখছি, তা কোনোমতেই হবার নয়, তখন পিতার দায়িত্ব আমি আর রাখব না। আমার বা সাধ্য