পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কম"ফল 6:80 আমি ক্ষমা করতে পারলেম না। আমার এ মরবার সময় নয়। আমার অনেক সখের কল্পনা, ভোগের আশা ছিল— অলপ কয়েক বৎসরের জীবনে তা একে একে সমস্তই টকরা টকরা হয়ে ভেঙেছে। আমার চেয়ে অনেক অযোগ্য অনেক নিবোধ লোকের ভাগ্যে অনেক অযাচিত সখে জাটেছে, আমার জটেও জটিল না— সেজন্য যারা দায়ী তাদের কিছুতেই ক্ষমা করতে পারব না— কিছুতেই না। আমার মৃত্যুকালের অভিশাপ যেন চিরজীবন তাদের পিছনে পিছনে ফেরে— তাদের সকল সাখকে কানা করে দেয়। তাদের তৃষ্ণার জলকে বাপ করে দেবার জন্য আমার দগধ জীবনের সমস্ত দাহকে যেন আমি রেখে যেতে পারি। হায়! প্ৰলাপ! সমস্তই প্ৰলাপ! অভিশাপের কোনো বলই নেই। আমার মৃত্যু কেবল আমাকেই শেষ করে দেবে— আর-কারও গায়ে হাত দিতে পারবে না। আঃ– তারা আমার জীবনটাকে একেবারে ছারখার করে দিলে, আর আমি মরেও তাদের কিছই করতে পারলেম না। তাদের কোনো ক্ষতি হবে না— তারা সুখে থাকবে, তাদের দাঁত-মাজা হতে আরম্ভ করে মশারি-কাড়া পৰ্যন্ত কোনো তুচ্ছ কাজটিও বন্ধ থাকবে না— অথচ আমার স্যা-চন্দ্র-নক্ষত্রের সমস্ত আলোক এক ফাংকারে নিবল-- আমার নেলি– উঃ, ও নাম নয় । 尊 ও কে ও ! হরেন ; সন্ধ্যার সময় বাগানে বার হয়েছে যে ! বাপ-মাকে লুকিয়ে চুরি করে কাঁচা পেয়ারা পাড়তে এসেছে। ওর আকাঙ্ক্ষা ওই কাঁচা পেয়ারার চেয়ে আর অধিক উধের চড়ে নি— ওই গাছের নিচু ডালেই ওর অধিকাংশ সুখ ফলে আছে। পথিবীতে ওর জীবনের কী মল্যে। গাছের একটা কাঁচা পেয়ারা যেমন, এ সংসারে ওর কাঁচা জীবনটাই বা তার চেয়ে কী এমন বড়ো। এখনি যদি ছিন্ন করা যায়, তবে জীবনের কত নৈরাশ্য হতে ওকে বাঁচানো যায় তা কে বলতে পারে। আর মাসিমা— ইঃ! একেবারে লটাপটি করতে থাকবে। আঃ ! ঠিক সময়টি, ঠিক পথানটি, ঠিক লোকটি। হাতকে আর সামলাতে পারছি নে । হাতটাকে নিয়ে কী করি । হাতটাকে নিয়ে কী করা যায় । ছড়ি লইয়া সতীশ সবেগে চারাগাছগুলিকে ক্ৰমাগত আঘাত করিতে লাগিল । তাহাতে তাহার উত্তেজনা ক্রমশ আরও বাড়িয়া উঠিতে লাগিল। অবশেষে নিজের হাতকে সে সবেগে আঘাত করিল; কিন্তু কোনো বেদনা বোধ করিল না। শেষে পকেটের ভিতর হইতে পিস্তল সংগ্রহ করিয়া লইয়া সে হয়েনের দিকে সবেগে অগ্রসর शशेंटङ व्लाकिठिन । হরেন। (চমকিয়া উঠিয়া) এ কী। দাদা নাকি। তোমার দুটি পায়ে পড়ি দাদা, তোমার দটি পায়ে পড়ি— বাবাকে বলে দিয়ো না । সতীশ । (চীংকার করিয়া) মেসোমশায়— মেসোমশায়— এইবেলা রক্ষা কবে – আর দেরি কোরো না— তোমার ছেলেকে এখনো রক্ষা করো। শশধর। (ছটিয়া আসিয়া) কী হয়েছে, সতীশ। কী হয়েছে। সকুমারী। (ছটিয়া আসিয়া) কী হয়েছে, আমার বাছার কী হয়েছে। হরেন। কিছুই হয় নি, মা—কিছুই না— দাদা তোমাদের সঙ্গে ঠাট্টা করছেন।