পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ SO গল্পগছে মাস্টারমশায় ভূমিকা রাত্রি তখন প্রায় দটা। কলিকাতার নিস্তব্ধ শব্দসমুদ্রে একটুখানি ঢেউ তুলিয়া একটা বড়ো জড়িগাড়ি ভবানীপুরের দিক হইতে আসিয়া বিজিতলাও-এর মোড়ের কাছে থামিল। সেখানে একটা ঠিকাগাড়ি দেখিয়া আরোহী বাব তাহাকে ডাকিয়া আনাইলেন। তাঁহার পাশে একটি কোট-হ্যাট-পরা বাঙালি বিলাত-ফেতা যবো সম্মুখের আসনে দুই পা তুলিয়া দিয়া একটা মদমত্ত অবস্থায় ঘাড় নামাইয়া ঘামাইতেছিল। এই যুবকটি নতন বিলাত হইতে আসিয়াছে। ইহারই অভ্যর্থনা-উপলক্ষে বন্ধমহলে একটা খানা হইয়া গেছে। সেই খানা হইতে ফিরিবার পথে একজন বন্ধ তাহাকে কিছদরে অগ্রসর করিবার জন্য নিজের গাড়িতে তুলিয়া লইয়াছেন। তিনি ইহাকে দু-তিনবার ঠেলা দিয়া জাগাইয়া কহিলেন, “মজুমদার, গাড়ি পাওয়া গেছে, বাড়ি যাও।” মজুমদার সচকিত হইয়া একটা বিলাতি দিব্য গালিয়া ভাড়াটে গাড়িতে উঠিয়া পড়িল। তাহার গাড়োয়ানকে ভালো করিয়া ঠিকানা বাংলাইয়া দিয়া ব্ৰহোম গাড়ির আরোহী নিজের গম্য পথে চলিয়া গেলেন । ঠিকা গাড়ি কিছদর সিধা গিয়া পাক-স্ট্রীটের সম্মুখে ময়দানের রাস্তায় মোড় লইল। মজুমদার আর-একবার ইংরেজি শপথ উচ্চারণ করিয়া আপন মনে কহিল, "এ কী। এ তো আমার পথ নয়! তার পরে নিদ্রাজড় অবস্থায় ভাবিল, হবেও বা, এইটিই হয়তো সোজা রাস্তা।” ময়দানে প্রবেশ করিতেই মজুমদারের গা কেমন করিয়া উঠিল। হঠাৎ তাহার মনে যেন তাহার আসনের শান্য অংশের আকাশটা নিরেট হইয়া তাহাকে ঠাসিয়া ধরিতেছে। মজুমদার ভাবিল, এ কী ব্যাপার। গাড়িটা আমার সঙ্গে এ কিরকম ব্যবহার শর করিল।’ “এই গাড়োয়ান, গাড়োয়ান " গাড়োয়ান কোনো জবাব দিল না। পিছনের খড়খড়ি খালিয়া ফেলিয়া সহিসটার হাত চাপিয়া ধরিল; কহিল, “তুম ভিতর অাকে বৈঠো।” সহিস ভীতকণ্ঠে কহিল, “নেহি, সাব, ভিতর নেহি যায়ে গা!” শুনিয়া মজুমদারের গায়ে কাঁটা দিয়া উঠিল; সে জোর করিয়া সহিসের হাত চাপিয়া কহিল, “জলদি ভিতর আও।” সহিস সবলে হাত ছিনাইয়া লইয়া নামিয়া দৌড় দিল। তখন মজুমদার পাশের দিকে ভয়ে ভয়ে তাকাইয়া দেখিতে লাগিল: কিছুই দেখিতে পাইল না, তব মনে হইল, পাশে একটা অটল পদার্থ একেবারে চাপিয়া বসিয়া আছে। কোনোমতে গলায় আওয়াজ আনিয়া মজুমদার কহিল, "গাডোয়ন, গাড়ি রেখো।” বোধ হইল, গাড়োরান যেন দাঁড়াইয়া উঠিয়া দই হাতে রাশ টানিয়া ঘোড়া থামাইতে চেষ্টা করিল—ঘোড়া কোনোমতেই থামিল না। না থামিয়া ঘোড়াদটা রেড রোডের রাস্তা ধরিয়া পনবার দক্ষিণের দিকে মোড় লইল। মজামদার ব্যস্ত হইয়া কহিল, “আরে, কাঁহা বাতা "