পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাস্টারমশায় 6 Us বড়োলোকের কাছ হইতে সার্টিফিকেট আনিতে পার?” কোনো বড়োলোককেই সে জ:নে না । শুনিয়া সাহেব আরও যেন খুশি হইয়াই কহিলেন, “আচ্ছা বেশ, প'চিশ টাকা বেতনে কাজ আরম্ভ করে, কাজ শিখিলে উন্নতি হইবে।” তার পরে সাহেব তাহার বেশভূষার প্রতি দৃষ্টি করিয়া কহিলেন, “পনেরো টাকা আগাম দিতেছি, আপিসের উপযুক্ত কাপড় তৈরি করাইয়া লইবে।” কাপড় তৈরি হইল, হরলাল আপিসেও বাহির হইতে আরম্ভ করিল। বড়ো সাহেব তাহাকে ভূতের মতো খাটাইতে লাগিলেন। অন্য কেরানিরা বাড়ি গেলেও হরলালের ছুটি ছিল না। এক-একদিন সাহেবের বাড়ি গিয়াও তাঁহাকে কাজ বঝোইয়া দিয়া আসিতে হইত। এমনি করিয়া কাজ শিখিয়া লইতে হরলালের বিলম্বব হইল না। তাহার সহযোগী কেরানিরা তাহাকে ঠকাইবার অনেক চেষ্টা করিল, তাহার বিরুদ্ধে উপরওয়ালাদের কাছে লাগালগিও করিল, কিন্তু এই নিঃশব্দ নিরীহ সামান্য হরলালের কোনো অপকার করিতে পারিল না । যখন তাহার চল্লিশ টাকা মাহিনা হইল, তখন হরলাল দেশ হইতে মাকে আনিয়া একটি ছোটোখাটো গলির মধ্যে ছোটোখাটো বাড়িতে বাসা করিল। এত দিন পরে তাহর মার দুঃখ ঘুচিল। মা বলিলেন, “বাবা, এইবার বউ ঘরে আনিব।” হরলাল মাতার পায়ের ধলো লইয়া বলিল, “মা, ওইটে মাপ করিতে হইবে।” মাতার আর-একটি অনুরোধ ছিল । তিনি বলিলেন, “তুই যে দিনরাত তোর ছাত্র বেণ গোপালের গল্প করিস, তাহাকে একবার নিমন্ত্ৰণ করিষা খাওয়া। তাহাকে আমার পেখিতে ইচ্ছা করে !" হরলাল কহিল, “মা, এ বাসায় তাহাকে কোথায় বসাইব । রোসো, একটা বড়ো বাস করি, তাহার পরে তাহাকে নিমন্ত্ৰণ করিব।” ● হরলালের বেতনবন্ধির সঙ্গে ছোটো গলি হইতে বড়ো গলি ও ছোটো বাড়ি হইতে ল: বাড়িতে তাহার বাস-পরিবতন হইল। তব সে কী জানি কী মনে করিয়া, অধপলালের বাড়ি যাইতে বা বেণকে নিজের বাসায় ডাকিয়া আনিতে কোনোমতেই মন পিথর করিতে পারিল না। হয়তো কোনোদিনই তাহার সংকোচ ঘচিত না। এমন সময়ে হঠাৎ খবর পাওয়া গেল বেণর মা মারা গিয়াছেন। শনিয়া মহত বিলব না করিয়া সে অধরলালের বাড়ি গিয়া উপস্থিত হইল। এই দুই অসমবয়সী বন্ধতে অনেক দিন পরে আবার একবার মিলন হইল। বেণর অশোঁচের সময় পার হইয়া গেল, তব এ বাড়িতে হরলালের ষাতায়াত চলিতে লাগিল। কিন্তু, ঠিক তেমনটি আর কিছুই নাই। বেশ এখন বড়ো হইয়া উঠিয়া অগাষ্ঠ ও তজনী যোগে তাহার নতন গোঁফের রেখার সাধ্যসাধনা করিতেছে। চালচলন বাবরানা ফটিয়া উঠিয়াছে। এখন তাহার উপযন্ত বন্ধবোধবেরও অভাব নাই।