পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ ザ 。 গল্পগুচ্ছ পৈতৃক সম্পত্তিতে তোমার যে অংশ সে তুমি পাইবে না কেন।” ভবানী কহিলেন, “তারাপদ বলে, পিতা আমাদিগকে ঐ তালকে ছাড়া আর-কিছ দেন নাই।” ব্রজসুন্দরী কহিলেন, "সে কথা বলিলে আমি শনিব কেন। কতা নিজের হাতে তাঁহার উইল দই প্রস্থ লিখিয়াছিলেন—তাহার এক প্রস্থ আমার কাছে রাখিয়াছেন; সে আমার সিন্দকেই আছে।” সিন্দকে খোলা হইল। সেখানে আলন্দি তালকের দানপত্র আছে, কিন্তু উইল নাই। উইল চুরি গিয়াছে। পরামর্শদাতাকে ডাকা হইল। লোকটি তাঁহাদের গরে্ঠাকুরের ছেলে, নাম বগলাচরণ। সকলেই বলে, তাহার ভারি পাকা বধি। তাহার বাপ গ্রামের মন্তদাতা, আর ছেলেটি মন্ত্রণাদাতা। পিতাপত্রে গ্রামের পরকাল ইহকাল ভাগাভাগি করিয়া লইয়াছে। অন্যের পক্ষে তাহার ফলাফল যেমনই হউক, তাহাদের নিজেদের পক্ষে কোনো অসুবিধা ঘটে নাই। বগলাচরণ কহিল, “উইল নাই পাওয়া গেল। পিতার সম্পত্তিতে দুই ভায়ের তো সমান অংশ থাকিবেই।” এমন সময় অপর পক্ষ হইতে একটা উইল বাহির হইল। তাহাতে ভবানীচরণের অংশে কিছই লেখে না। সমস্ত সম্পত্তি পৌত্রদিগকে দেওয়া হইয়াছে। তখন অভয়াচরণের পত্র জন্মে নাই। বগলাকে কাণ্ডারী করিষা ভবানী মকদ্দমার মহাসমুদ্রে পাড়ি দিলেন। কদরে আসিয়া লোহার সিন্দকটি যখন পরীক্ষা করিয়া দেখিলেন তখন দেখিতে পাইলেন, লক্ষীপেচার বাসাটি একেবারে শনা— সামান্য দুটো-একটা সোনার পালক খসিয়া পড়িয়া আছে। পৈতৃক সম্পত্তি অপর পক্ষের হাতে গেল। আর, আলন্দি তালকের যে ডগাটুকু মকদ্দমা-খরচার বিনাশতল হইতে জাগিয়া রহিল কোনোমতে তাহাকে আশ্রয় করিয়া থাকা চলে মাত্র, কিন্তু বংশমর্যাদা রক্ষা করা চলে না। পরাতন বাড়িটা ভবানীচরণ পাইয়া মনে করিলেন, ভারি জিতিয়াছি। তারাপদর দল সদরে চলিয়া গেল । উভয় পক্ষের মধ্যে আর দেখাসাক্ষাৎ রহিল না। दे করিয়া কতার উইল চুরি করিয়া ভাইকে বঞ্চিত করিল এবং পিতার বিশ্বাসভঙ্গ করিল, ইহা তিনি কোনোমতেই ভুলিতে পারিলেন না। তিনি যতদিন বাঁচিরা ছিলেন প্রতিদিনই দীঘনিশ্ববাস ফেলিয়া বারবার করিয়া বলিতেন, "ধমে ইহা কখনোই সহিবে না।” ভবানীচরণকে প্রায়ই প্রতিদিন তিনি এই বলিয়া আশ্বাস দিয়াছেন যে, “আমি আইনআদালত কিছুই বুঝি না ; আমি তোমাকে বলিতেছি, কতার সে উইল কখনোই চিরদিন চাপা থাকিবে না। সে তুমি নিশ্চয়ই ফিরিয়া পাইবে।” বরাবর মাতার কাছে এই কথা শুনিয়া ভবানীচরণ মনে অত্যন্ত একটা ভরসা পাইলেন। তিনি নিজে অক্ষম বলিয়া এইরুপ আশ্বাসবাক্য তাঁহার পক্ষে অত্যন্ত