পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাসমণির ছেলে (; Ե Գ সাস্ত্ৰনার জিনিস। সতীসাধনীর বাক্য ফলিবেই, যাহা তাঁহারই তাহা আপনিই তাঁহার কাছে ফিরিয়া আসিবে, এ কথা তিনি নিশ্চয় স্থির করিয়া বসিয়া রহিলেন। মাতার মৃত্যুর পরে এ বিশ্বাস তাঁহার আরও দঢ় হইয়া উঠিল—কারণ মৃত্যুর বিচ্ছেদের মধ্য দিয়া মাতার পণ্যতেজ তাঁহার কাছে আরও অনেক বড়ো করিয়া প্রতিভাত হইল। দারিদ্রোর সমস্ত অভাবপীড়ন যেন তাঁহার গায়েই বাজিত না। মনে হইত, এই-যে অন্নবসের কন্ট, এই-ষে পাবেীকার চালচলনের ব্যত্যয়, এ যেন দ্য দিনের একটা অভিনয়মাত্র—এ কিছুই সত্য নহে। এইজন্য সাবেক ঢাকাই ধতি ছিড়িয়া গেলে যখন কম দামের মোটা ধতি তাঁহাকে কিনিয়া পরিতে হইল তখন তাঁহার হাসি পাইল । পজার সময় সাবেক কালের ধামধাম চলিল না, নমোনম করিয়া কাজ সারিতে হইল; অভ্যগতজন এই দরিদ্র আয়োজন দেখিয়া দীঘনিশ্বাস ফেলিয়া সাবেক কালের কথা পাড়িল । ভবানীচরণ মনে মনে হাসিলেন ; তিনি ভাবিলেন, ইহারা জানে না, এ-সমস্তই কেবল কিছুদিনের জন্য— তাহার পর এমন ধম করিয়া একদিন পজো হইবে যে, ইহাদের চক্ষুস্থির হইয়া যাইবে । সেই ভবিষ্যতের নিশ্চিত সমারোহ তিনি এমনি প্রত্যক্ষের মতো দেখিতে পাইতেন যে, বর্তমান দৈন্য তাঁহার চোখেই পড়িত না । এ সম্বন্ধে তাঁহার আলোচনা করিবার প্রধান মানষেটি ছিল নোটো চাকর । কতবার পজোৎসবের দারিদ্রোর মাঝখানে বসিয়া প্রভু-ভূত্যে ভাবী সদিনে কিরুপ আয়োজন করিতে হইবে তাহারই বিস্তারিত আলোচনায় প্রবত্ত হইয়াছেন। এমন-কি কাহাকে নিমন্ত্রণ করিতে হইবে না-হইবে এবং কলিকাতা হইতে যারার দল আনিবার প্রয়োজন আছে কি না, তাহা লইয়া উভয় পক্ষে ঘোরতর মতান্তর ও তকবিতক হইয়া গিয়াছে । স্বভাবসিদ্ধ অনেীদাযবশত নটবিহারী সেই ভাবীকালের ফদ-রচনায় কৃপণতা প্রকাশ করায় ভবানীচরণের নিকট হইতে তীব্র ভৎসনা লাভ করিয়াছে। এরাপ ঘটনা প্রায়ই ੋਣ ! 譬 মোটের উপর বিষয়সম্পত্তি সম্বন্ধে ভবানীচরণের মনে কোনোপ্রকার দাশিচক্ৰতা ছিল না। কেবল তাঁহার একটিমাত্র উদবেগের কারণ ছিল, কে তাঁহার বিষয় ভোগ করিবে । আজ পর্যন্ত তাঁহার সন্তান হইল না। কন্যাদায়গ্রস্ত হিতৈষীরা যখন তাঁহাকে আর-একটি বিবাহ করিতে অনুরোধ করিত তখন তাঁহার মন এক-একবার চঞ্চল হইত : তাহার কারণ এ নয় যে, নববধ সম্বন্ধে তাঁহার বিশেষ শখ ছিল— বরঞ্চ সেবক ও অক্সের ন্যায় স্ত্রীকেও পরাতনভাবেই তিনি প্রশস্ত বলিয়া গণ্য করিতেন— কিন্তু যাহার ঐশ্বয সম্পভাবনা আছে তাহার সন্তানসম্ভাবনা না থাকা বিষম বিড়ম্ববনা বলিয়াই তিনি জানিতেন । এমন সময় যখন তাঁহার পত্র জন্মিল তখন সকলেই বলিল, এইবার এই ঘরের ভাগ্য ফিরিবে তাহার সত্রপাত হইয়াছে— স্বয়ং বগীয় কত অভয়াচরণ আবার এ ঘরে জমিয়াছেন, ঠিক সেই রকমেরই টানা চোখ। ছেলের কোঠীতেও দেখা গেল, গ্রহে নক্ষত্রে এমনিভাবে যোগাযোগ ঘটিয়াছে যে, হতসম্পত্তি উদ্ধার না হইয়া যায় না । ছেলে হওয়ার পর হইতে ভবানীচরণের ব্যবহারে কিছু পরিবতন লক্ষ্য করা গেল। এতদিন পর্যন্ত দারিদ্র্যকে তিনি নিতান্তই একটা খেলার মতো সকৌতুকে অতি অনায়াসেই বহন করিয়াছিলেন, কিন্তু ছেলের সবন্ধে সে ভাবটি তিনি রক্ষা করিতে পারিলেন না। শানিয়াড়ির বিখ্যাত চৌধুরীদের ঘরে নিবাগপ্রায় কুলপ্রদীপকে উজল