পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&సి Sు গল্পগুচ্ছ হইতে অনেক কন্টে জমানো এই নোটটিকেই কালীপদ যথাথ পবিত্র কবচের ন্যায় জ্ঞান করিয়া গ্রহণ করিল— এই নোটটিকে মাতার আশীবাদের মতো সে চিরদিন রক্ষা করিবে, কোনোদিন খরচ করিবে না, এই সে মনে মনে সংকল্প করিল। ළු ভবানীচরণের মখে উইল-চুরির কথাটা এখন আর তেমন শোনা যায় না। এখন তাহার একমাত্র আলোচনার বিষয় কালীপদ। তাহারই কথা বলিবার জন্য তিনি এখন সমস্ত পাড়া ঘুরিয়া বেড়ান। তাহার চিঠি পাইলে ঘরে ঘরে তাহা পড়িয়া শনাইবার উপলক্ষে নাক হইতে চশমা আর নামিতে চায় না। কোনোদিন এবং কোনো পর্বষে কলিকাতায় যান নাই বলিয়াই কলিকাতার গৌরববোধে তাঁহার কল্পনা অত্যন্ত উত্তেজিত হইয়া উঠিল। আমাদের কালীপদ কলিকাতায় পড়ে এবং কলিকাতার কোনো সংবাদই তাহার অগোচর নাই— এমন-কি, হুগলির কাছে গঙ্গার উপর দ্বিতীয় আর-একটা পল বাধা হইতেছে, এ-সমস্ত বড়ো বড়ো খবর তাহার কাছে নিতান্ত ঘরের কথা মাত্র। “শনেছ, ভায়া ? গঙ্গার উপর আর-একটা যে পল বাঁধা হচ্ছে— আজই কালীপদর চিঠি পেয়েছি, তাতে সমস্ত খবর লিখেছে।”— বলিয়া চশমা খুলিয়া তাহার কাঁচ ভালো করিয়া মছিয়া চিঠিখানি অতি ধীরে ধীরে আদ্যোপাত প্রতিবেশীকে পড়িয়া শনাইলেন। “দেখছ ভায়া! কালে কালে কতই যে কী হবে তার ঠিকানা নেই। শেষকালে ধলোপায়ে গঙ্গার উপর দিয়ে কুকুর-শেয়ালগুলোও পার হয়ে যাবে, কলিতে এও ঘটল হে!” গঙ্গার এইরুপ মাহাত্ম্যখব নিঃসন্দেহই শোচনীয় ব্যাপার, কিন্তু কালীপদ যে কলিকালের এতবড়ো একটা জয়বাত তাঁহাকে লিপিবদ্ধ করিয়া পাঠাইয়াছে এবং গ্রামের নিতান্ত অজ্ঞ লোকেরা এ খবরটা তাহারই কল্যাণে জানিতে পারিয়াছে, সেই আনন্দে তিনি বৰ্তমান যাগে জীবের অসীম দগতির দশিচন্তাও অনায়াসে ভুলিতে পারলেন। যাহার দেখা পাইলেন তাহারই কাছে মাথা নাড়িয়া কহিলেন, “আমি বলে দিচ্ছি, গঙ্গা আর বেশি দিন নাই।” মনে মনে এই আশা করিয়া রহিলেন, গঙ্গা যখনই যাইবার উপক্ৰম করিবেন তখনই সে খবরটা সব প্রথমে কালীপদর চিঠি হইতেই পাওয়া যাইবে । এ দিকে কলিকাতায় কালীপদ বহন কন্টে পরের বাসায় থাকিয়া ছেলে পড়াইয়া, রাত্রে হিসাবের খাতা নকল করিয়া, পড়াশনা চালাইতে লাগিল। কোনোমতে এনট্রেস পরীক্ষা পার হইয়া পনরায় সে বত্তি পাইল। এই আশ্চর্য ঘটনা-উপলক্ষে সমস্ত গ্রামের লোককে প্রকাণ্ড একটা ভোজ দিবার জন্য ভবানীচরণ ব্যস্ত হইয়া পড়িলেন। তিনি ভাবিলেন, তরণী তো প্রায় কলে আসিয়া ভিড়িল—সেই সাহসে এখন হইতে মন খলিয়া খরচ করা যাইতে পারে। রাসমণির কাছে কোনো উৎসাহ না পাওয়াতে ভোজটা বন্ধ রহিল। কালীপদ এবার কলেজের কাছে একটি মেসে আশ্রয় পাইল । মেসের যিনি অধিকারী তিনি তাহাকে নীচের তলার একটি অব্যবহাষ ঘরে থাকিতে অনুমতি দিয়াছেন। কালীপদ বাড়িতে তাঁহার ছেলেকে পড়াইয়া দইবেলা খাইতে পায় এবং মেসের সেই স্যাৎসে’তে অন্ধকার ঘরে তাহার বাসা। ঘরটার একটা মস্ত সুবিধা এই