পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাসমণির ছেলে ●0公 অসহ্য। আগের বারে তাহার এই-সমস্ত বিশেষ জিনিসগুলিকে তক্তাপোশের নীচে পরানো খবরের কাগজ প্রভৃতি চাপা দিয়া প্রচ্ছন্ন করিয়া রাখিত। এবারে তালাচাবির আশ্রয় লইল। যখন সে পাঁচ মিনিটের জন্যও ঘরের বাহিরে বাইত ঘরে তালা বন্ধ করিয়া যাইত। এটা সকলেরই চোখে লাগিল। শৈলেন বলিল, “ধনরত্ন তো বিস্তর ঘরে ঢুকিলে চোরের চক্ষে জল আসে— সেই ঘরে ঘন ঘন তালা পড়িতেছে— একেবারে দ্বিতীর ‘বাল্ডক অব বেঙ্গল হইয়া উঠিল দেখিতেছি। আমাদের কাহাকেও বিশ্বাস নাই— পাছে ঐ পাবনার ছিটের চায়না কোটটার লোভ সামলাইতে না পারি। ওহে রাধ, ওকে একটা ভদ্রগোছের নতন কোট কিনিয়া না দিলে তো কিছুতেই চলিতেছে না। চিরকাল ওর ঐ একমাত্র কোট দেখিতে দেখিতে আমার বিরক্ত ধরিয়া গেছে ।” শৈলেন কোনোদিন কালীপদর ঐ লোনাধরা চুনবালি-খসা অন্ধকার ঘরটার মধ্যে প্রবেশ করে নাই। সিড়ি দিয়া উপরে উঠিবার সময় বাহির হইতে দেখিলেই তাহার সবশরীর সংকুচিত হইয়া উঠিত। বিশেষত সন্ধ্যার সময় যখন দেখিত একটা টিমটিমে প্রদীপ লইয়া একলা সেই বায়শন্য বন্ধ ঘরে কালীপদ গা খলিয়া বসিয়া বইয়ের উপর ঝ:কিয়া পড়িয়া পড়া করিতেছে, তখন তাহার প্রাণ হাঁপাইয়া উঠিত। দলের লোককে শৈলেন বলিল, “এবারে কালীপদ কোন সাত রাজার ধন মানিক আহরণ করিয়া আনিয়াছে, সেটা তোমরা খ:জিয়া বাহির করো।” এই কৌতুকে সকলেই উৎসাহ প্রকাশ করিল। কালীপদর ঘরের তালাটি নিতান্তই অলপ দামের তালা; তাহার নিষেধ খাব প্রবল নিষেধ নহে; প্রায় সকল চাবিতেই এ তালা খোলে। একদিন সন্ধ্যার সময় কালীপদ যখন ছেলে পড়াইতে গিয়াছে, সেই অবকাশে জন দুই-তিন অত্যন্ত আমাদে ছেলে হাসিতে হাসিতে তালা খলিয়া একটা লণ্ঠন হাতে তাহার ঘরে প্রবেশ করিল। তত্তাপোশের নীচে হইতে আচার চাটনি আমসত্ত্ব প্রভৃতির ভান্ডগুলিকে আবিস্কার করিল। কিন্তু, সেগুলি যে বহমাল্য গোপনীয় সামগ্ৰী তাহা তাহাদের মনে হইল না। খুজিতে খুজিতে বালিশের নীচে হইতে রিং-সমেত এক চাবি বাহির হইল। সেই চাবি দিয়া টিনের বাক্সটা খলিতেই কয়েকটা ময়লা-কাপড় বই খাতা কাঁচ ছয়রি কলম ইত্যাদি চোখে পড়িল । বাক্স বন্ধ করিয়া তাহারা চলিয়া যাইবার উপক্ৰম করিতেছে, এমন সময়ে সমস্ত কাপড়-চোপড়ের নীচে রমোলে মোড়া একটা কী পদাৰ্থ বাহির হইল। রমাল খলিতেই ছোড়া কাপড়ের মোড়ক দেখা দিল। সেই মোড়কটি খোলা হইলে একটির পর আর-একটি প্রায় তিন-চারখানা কাগজের আবরণ ছাড়াইয়া ফেলিয়া একখানি পঞ্চাশ টাকার নোট বাহির হইয়া পড়িল। এই নোটখানা দেখিয়া আর কেহ হাসি রাখিতে পড়ল না। হো-হো করিয়া উচ্চস্বরে হাসিয়া উঠিল। সকলেই সিথর করিল, এই নোটখানারই জন্য কালীপদ ঘন ঘন ঘরে চাবি লাগাইতেছে, পথিবীর কোনো লোককেই বিশ্বাস করিতে পারিতেছে না। লোকটার কৃপণতা এবং সন্দিগ্ধ প্রকৃতিতে শৈলেনের প্রসাদপ্রত্যাশী সহচরগুলি दिश्विाड झईझा छैठेिठन । এমন সময় হঠাৎ মনে হইল, রাস্তায় কালীপদর মতো যেন কাহার কাশি শোনা