পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাসমণির ছেলে & O.6% বিছানার পাশেব বসিয়া পড়িতে আরম্ভ করিল। চিঠিতে ঠিকানা পড়িয়াই একেবারে চমকিয়া উঠিল। শানিয়াড়ি, চৌধুরীবাড়ি, ছয়-আনি ! নীচে নাম দেখিল, ভবানীচরণ দেবশমা। ভবানীচরণ চৌধুরী ! চিঠি রাখিয়া সতৰধ হইয়া বসিয়া সে কালীপদর মখের দিকে চাহিয়া রহিল। কিছুদিন পবে একবার তাহার সহচরদের মধ্যে কে একজন বলিয়াছিল, তাহার মখের সঙ্গে কালীপদর মখের অনেকটা আদল আসে। সে কথাটা তাহার শনিতে ভালো লাগে নাই এবং অন্য সকলে তাহা একেবারে উড়াইয়া দিয়াছিল। আজ বঝিতে পারিল, সে কথাটা অমলক নহে। তাহার পিতামহরা দুই ভাই ছিলেন— শ্যামাচরণ এবং ভবানীচরণ, এ কথা সে জানিত । তাহার পরবতীকালের ইতিহাস তাহাদের বাড়িতে কখনো আলোচিত হয় নাই। ভবানীচরণের ষে পত্র আছে এবং তাহার নাম কালীপদ, তাহা সে জানিতই না। এই কালীপদ ! এই তাহার খড়া ! শৈলেনের তখন মনে পড়িতে লাগিল, শৈলেনের পিতামহী, শ্যামাচরণের সী যতদিন বাঁচিয়া ছিলেন, শেষ পর্যন্ত পরম সেনহে তিনি ভবানীচরণের কথা বলিতেন । ভবানীচরণের নাম করিতে তাঁহার দুই চক্ষে জল ভরিয়া উঠিত। ভবানীচরণ তাঁহার দেবর বটে, কিন্তু তাঁহার পত্রের চেয়ে বয়সে ছোটো— তাহাকে তিনি আপন ছেলের মতোই মানুষ করিয়াছেন। বৈষয়িক বিপ্লবে যখন তাঁহারা স্বতন্ত্র হইয়া গেলেন তখন ভবানীচরণের একটা খবর পাইবার জন্য তাঁহার বক্ষ তৃষিত হইয়া থাকিত । তিনি বারবার তাঁহার ছেলেদের বলিয়াছেন, “ভবানীচরণ নিতান্ত অবঝে ভালেমানষে বলিয়া নিশ্চয়ই তোরা তাহাকে ফাঁকি দিয়াছিস— আমার বশর তাহাকে এত ভালোবাসিতেন, তিনি যে তাহাকে বিষয় হইতে বঞ্চিত করিয়া যাইবেন, এ কথা আমি বিশ্ববাস করিতে পারি না ।” তাঁহার ছেলেরা এ-সব কথায় অত্যন্ত বিরক্ত হইত এবং শৈলেনের মনে পড়িল, সেও তাহার পিতামহীর উপর অত্যন্ত রাগ করিত। এমন-কি, পিতামহী তাঁহার পক্ষ অবলম্ববন করিতেন বলিয়া ভবানীচরণের উপরেও তাহার ভারি রাগ হইত। বতমানে ভবানীচরণের যে এমন দরিদ্র অবস্থা তাহাও সে জানিত না— কালীপদর অবস্থা দেখিয়া সকল কথা সে বাকিতে পারিল এবং এতদিন সহস্র প্রলোভন-সত্ত্বেও কালীপদ যে তাহার অনুচরশ্রেণীতে ভতি হয় নাই ইহাতে সে ভারি গৌরব অনুভব করিল। যদি দৈবাৎ কালীপদ তাহার অন্বতী হইত তবে আজ যে তাহার লজ্জার সীমা থাকিত না । শৈলেনের দলের লোকেরা এতদিন প্রত্যহই কালীপদকে পীড়ন ও অপমান করিয়াছে । এই বাসাতে তাহাদের মাঝখানে কাকাকে শৈলেন রাখিতে পারিল না। ডাক্তারের পরামশ লইয়া অতিযত্নে তাহাকে একটা ভালো বাড়িতে স্থানান্তরিত করিল। ভবানীচরণ শৈলেনের চিঠি পাইয়া একটি সঙ্গী আশ্রয় করিয়া তাড়াতাড়ি কলিকাতায় ছটিয়া আসিলেন। আসিবার সময় ব্যাকুল হইয়া রাসমণি তাঁহার কষ্টসঞ্চিত অর্থের অধিকাংশই তাঁহার স্বামীর হাতে দিয়া বলিলেন, “দেখো যেন অযত্ন না হয়। যদি তেমন বোঝ আমাকে খবর দিলেই আমি যাব।" চৌধুরীবাড়ির বধরে