পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

やO Nり গল্পগুচ্ছ পক্ষে হট হট করিয়া কলিকাতায় যাওয়ার প্রস্তাব এতই অসংগত যে, প্রথম সংবাদেই তাঁহার যাওয়া ঘটিল না। তিনি রক্ষাকালীর নিকট মানত করিলেন এবং গ্রহাচাষকে ডাকিয়া সবসত্যয়ন করাইবার ব্যবস্থা করিয়া দিলেন। ভবানীচরণ কালীপদর অবসথা দেখিয়া হতবুদ্ধি হইয়া গেলেন। কালীপদর তখন ভালো করিয়া জ্ঞান হয় নাই; সে তাঁহাকে মাস্টারমশায় বলিয়া ডাকিল-— ইহাতে তাঁহার বক ফাটিয়া গেল। কালীপদ প্রায় মাঝে মাঝে প্রলাপে বাবা’ বাবা বলিয়া ডাকিয়া উঠিতেছিল—তিনি তাহার হাত ধরিয়া তাহার মুখের কাছে মুখ লইয়া গিয়া উচ্চস্বরে বলিতেছিলেন, "এই-যে বাবা, এই-যে আমি এসেছি।” কিন্তু সে যে তাঁকে চিনিয়াছে এমন ভাব প্রকাশ করিল না। ডাক্তার আসিয়া বলিলেন, “জর পবের চেয়ে কিছু কমিয়াছে, হয়তো এবার ভালোর দিকে যাইবে।” কালীপদ ভালোর দিকে যাইবে না, এ কথা ভবানীচরণ মনেই করিতে পারেন না। বিশেষত, তাহার শিশুকাল হইতে সকলেই বলিয়া আসিতেছে, কালীপদ বড়ো হইয়া একটা অসাধ্য সাধন করিবে— সেটাকে ভবানীচরণ কেবলমাত্র লোকমুখেব কথা বলিয়া গ্রহণ করেন নাই— সে বিশ্ববাস একেবারে তাঁহার সংস্কারগত হইয গিয়াছিল। কালীপদকে বাঁচতেই হইবে, এ তাহার ভাগ্যের লিখন । এই কাবণে, ডাক্তাব যতটুকু ভালো বলে তিনি তাহার চেযে অনেক বেশি ভালো শুনিয়া বসেন এবং রাসমণিকে যে পত্র লেখেন তাহাতে আশঙ্কার কোনো কথাই থাকে না ! শৈলেন্দ্রের ব্যবহারে ভবানীচরণ একেবারে অ্যশচয় হইয়া গেলেন । সে যে তাঁহাব পরমাত্মীয় নহে, এ কথা কে বলিবে । বিশেষত, কলিকাতার সুশিক্ষিত সুসভ্য ছেলে হইয়াও সে তাঁহাকে যেরকম ভক্তিশ্রদ্ধা করে এমন তো দেখা যায় না । তিনি ভাবিলেন, কলিকাতার ছেলেদের বুঝি এইপ্রকারই সবভাব। মনে মনে ভাবিলেন, ‘সে তো হবারই কথা, আমাদের পাড়াগোয়ে ছেলেদের শিক্ষাই বা কণী আর সহবতই বা কণী ।” জর কিছু কিছু কমিতে লাগিল এবং কালীপদ রুমে চৈতন্য লাভ করিল। পিতাকে শষ্যার পাশে দেখিয়া সে চমকিয়া উঠিল ; ভাবিল, তাহার কলিকাতার অবস্থার কথা এইবার তাহার পিতার কাছে ধরা পড়িবে। তাহার চেয়ে ভাবনা এই যে, তাহার গ্রামা পিতা শহরের ছেলেদের পরিহাসের পাত হইয়া উঠিবেন । চাবি দিকে চাহিয়া দেখিয়া সে ভাবিয়া পাইল না, এ কোন ঘর। মনে হইল এ কি বন দেখিতেছি ? তখন তাহার বেশি-কিছু চিন্তা করিবার শক্তি ছিল না। তাহার মনে হইল, অসুখের খবর পাইয়া তাহার পিতা আসিয়া একটা ভালো বাসায় অনিয়া রাখিয়াছেন। কী করিয়া আনিলেন, তাহার খরচ কোথা হইতে জোগাইতেছেন এত খরচ করিতে থাকিলে পরে কিরুপ সংকট উপস্থিত হইবে, সে-সব কথা ভালিবার তাহার সময় নাই। এখন তাহাকে বাঁচিয়া উঠিতে হইবে, সেজন্য সমস্ত পথিবীর উপর তাহার যেন দাবি আছে। এক সময়ে যখন তাহার পিতা ঘরে ছিলেন না এমনসময় শৈলেন একটি পাত্রে কিছ ফল লইয়া তাহার কাছে আসিয়া উপস্থিত হইল। কালীপদ অবাক হইয়া