পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

帖 পণরক্ষা ծ ՀԳ করিতে লাগিল । এইরপে তাঁহার তহবিল যতই সফীত হইয়া উঠিল, অল্পবয়সের অকিঞ্চন অবস্থার সমস্ত উৎসাহ ততই তাঁহার কাছে নিতান্ত ছেলেমানষি বলিয়া বোধ হইতে লাগিল। কোনোমতে পারিবারিক পাব-ইতিহাসের এই অধ্যায়টাকে বিলতে করিয়া দিয়া সমাজে উঠিবার জন্য তাঁহার রোখ চাপিয়া উঠিল। নিজের মেয়েটিকে সমাজে বিবাহ দিবেন, এই তাঁর জেদ। ট্রাকার লোভ দেখাইয়া দই-একটি পারকে রাজি করিয়াছিলেন, কিন্তু যখনই তাহাদের আত্মীয়েরা খবর পাইল তখনই তাহারা গোলমাল করিয়া বিবাহ ভাঙ্গিয়া দিল। শিক্ষিত সংপার না হইলেও তাঁহার চলে— কন্যার চিরজীবনের সখ বলিদান দিয়াও তিনি সমাজদেবতার প্রসাদলাভের জন্য উৎসকে হইয়া উঠিলেন। এমন সময় তিনি তাঁতের ইস্কুলের মাস্টারের খবর পাইলেন। সে থানাগড়ের বসাক-বংশের ছেলে— তাহার পর্ব পরষে অভিরাম বসাকের নাম সকলেই জানে— এখন তাহাদের অবস্থা হীন, কিন্তু কুলে তাহারা তাঁহাদের চেয়ে বড়ো। দর হইতে দেখিয়া গহিণীর ছেলেটিকে পছন্দ হইল। স্বামীকে জিজ্ঞাসা করিলেন, "ছেলেটির পড়াশনা কিরকম।” জানকীবাবু বলিলেন, “সে বালাই নাই। আজকাল যাহার পড়াশনা বেশি তাহাকে হিন্দুয়ানিতে অটিয়া ওঠা শক্ত।" গহিণী প্রশ্ন করিলেন, “টাকাকড়ি ?” জানকীবাব বলিলেন, “যথেষ্ট অভাব আছে। আমার পক্ষে সেইটেই লাভ।” গহিণী কহিলেন, “আত্মীয়স্বজনদের তো ডাকিতে হইবে।” জানকীবাব কহিলেন, “পবে অনেকবার সে পরীক্ষা হইয়া গিয়াছে: তাহাতে আত্মীযসবজনের দ্রুতবেগে ছটিয়া আসিয়াছে, কিন্তু বিবাহ হয় নাই। এবারে সিথর করিষাছি, আগে বিবাহ দিব, আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে মিস্টালাপ পরে সময়মতো করা যাইবে ।" রসিক যখন দিনে রাত্রে তাহার গ্রামে ফিরিবার কথা চিন্তা করিতেছে, এবং হঠাৎ অভাবনীয়রপে অতি সত্বর টাকা জমাইবার কী উপায় হইতে পারে তাহা ভাবিয়া কোনো কলেকিনারা পাইতেছে না, এমন সময় আহার ঔষধ দুইই তাহার মুখেব কাছে আসিয়া উপস্থিত হইল। হা করিতে সে আর এক মহত বিলব করিতে চাহিল না। জানকীবাব জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার দাদাকে খবর দিতে চাও ?” রসিক কহিল, "না, তাহার কোনো দরকার নাই।” সমস্ত কাজ নিঃশেষে সারিয়া তাহার পরে সে দাদাকে চমৎকৃত করিয়া দিবে ; অকমণ্য রসিকের যে সামথ্য কিরকম তাহার প্রত্যক্ষ প্রমাণে কোনো তাটি থাকিবে না। শভেলনে বিবাহ হইয়া গেল। অন্যান্য সকলপ্রকার দানসামগ্রীর আগে রসিক একটা বাইসিকল দাবি করিল।