পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হালদারগোষ্ঠী & 8 S. তাহার প্রতি তাহার গভীর স্নেহ এবং কর্ণা। সকল মানুষেরই প্রকৃতির মধ্যে বিধাতা এমন একটা-কিছল দেন যাহা তাহার প্রকৃতিবিরধে, নহিলে বনোয়ারি বে কেমন করিয়া পাখি শিকার করিতে পারে বোঝা যায় না। কিরণের কোলে একটি শিশুর উদয় দেখিবে, এই ইচ্ছা বনোয়ারির মনে বহুকাল হইতে অতৃপ্ত হইয়া আছে। এইজন্য বংশীর ছেলে হইলে প্রথমটা তাহার মনে একটা ঈষার বেদনা জমিয়াছিল, কিন্তু সেটাকে দরে করিয়া দিতে তাহার বিলম্ব হয় নাই। এই শিশুটিকে বনোয়ারি খবই ভালোবাসিতে পারিত, কিন্তু ব্যাঘাতের কারণ হইল এই যে, যত দিন যাইতে লাগিল কিরণ তাহাকে লইয়া অত্যন্ত বেশি ব্যাপ্ত হইয়া পড়িল। সীর সঙ্গে বনোয়ারির মিলনে বিস্তর ফাঁক পড়ি:ত লাগিল। বনোয়ারি পষ্টই বুঝিতে পারিল, এতদিন পরে কিরণ এমন একটা-কিছর পাইয়াছে যাহা তাহার হদয়কে সত্যসত্যই পণ করিতে পারে। বনোয়ারি যেন তাহার সীর হৃদয়হমোর একজন ভাড়াটে; যতদিন বাড়ির কতা অনুপস্থিত ছিল ততদিন সমস্ত বাড়িটা সে ভোগ করিত, কেহ বাধা দিত না— এখন গহসবামী আসিয়াছে তাই ভাড়াটে সব ছাড়িয়া তাহার কোণের ঘরটি মাত্র দখল করিতে অধিকারী । কিরণ সেনহে যে কতদর তন্ময় হইতে পারে, তাহার আত্মবিসর্জনের শক্তি যে কত প্রবল, তাহা বনোয়ারি যখন দেখিল তখন তাহার মন মাথা নাড়িয়া বলিল, এই হৃদয়কে আমি তো জাগাইতে পারি নাই, অথচ আমার যাহা সাধ্য তাহা তো করিয়াছি { শুধু তাই নয়, এই ছেলেটির সত্রে বংশীর ঘরই যেন কিরণের কাছে বেশি অপেন হইয়া উঠিষাছে । তাহার সমস্ত মন্ত্রণা আলোচনা বংশীর সঙ্গেই ভালো করিয়া জমে । সেই সক্ষোবধি সক্ষমশরীর রসরক্তহীন ক্ষীণজীবী ভীর মানুষটার প্রতি বনোয়ারির অবজ্ঞা ক্ৰমেই গভীরতর হইতেছিল। সংসারের সকল লোকে তাহাকেই লনোয়ারির চেয়ে সকল বিষয়ে যোগ্য বলিয়া মনে করে তাহা বনোয়ারির সহিষাছে : কিন্তু আজ সে যখন বারবার দেখিল, মানুষ হিসাবে তাহার দীর কাছে বংশীর মালা বেশি, তখন নিজের ভাগ্য এবং বিশ্বসংসারেব প্রতি তাহার মন প্রসন্ন হইল না । এমন সময়ে পরীক্ষার কাছাকাছি কলিকাতার বাসা হইতে খবর আসিল, বংশী জনরে পড়িয়াছে এবং ডাক্তার আরোগ্য অসাধ্য বলিয়া আশঙ্কা করিতেছে। বনোয়ারি কলিকাতায গিয়া দিনরাত জাগিয়া বংশীর সেবা করিল, কিন্তু তাহাকে বাঁচাইতে পারিল না । মৃত্যু বনোয়ারির সমতি হইতে সমস্ত কাঁটা উৎপাটিত করিয়া লইল। বংশী যে তাহার ছোটো ভাই এবং শিশবেয়সে দাদার কোলে ষে তাহার নেহের আশ্রয় ছিল, এই কথাই তাহার মনে আশ্রধৌত হইয়া উজ্জল হইয়া উঠিল। এবার ফিরিয়া আসিয়া তাহার সমস্ত প্রাণের যত্ন দিয়া শিশুটিকে মানুষ করিতে সে কৃতসংকল্প হইল। কিন্তু, এই শিশু সবন্ধে কিরণ তাহার প্রতি বিশ্বাস হারাইয়াছে। ইহার প্রতি তাহার স্বামীর বিরাগ সে প্রথম হইতেই লক্ষ্য করিয়াছে । স্বামীর সম্প্রবন্ধে কিরণের মনে কেমন একটা ধারণা হইয়া গেছে যে, অপর সাধারণের পক্ষে যাহা স্বাভাবিক তাহার স্বামীর পক্ষে ঠিক তাহার উলটা। তাহাদের বংশের এই তো একমাত্র কুলপ্রদীপ, ইহার মাল্য যে কী তাহা আর-সকলেই বোঝে, নিশ্চয় সেইজন্যই তাহার স্বামী তাহা বোঝে না। কিরণের মনে সবদাই ভয়, পাছে বনোয়ারির