পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Wり○ や গল্পগুচ্ছ করিবার সাহস বা অভ্যাস আমার ছিল না। সেদিন থাকিতে পারিলাম না। লজার মাথা খাইয়া তাঁহাকে বলিয়া বসিলাম, "বউয়ের শরীর ভালো নয়, তাহাকে একবার বাপের কাছে পাঠাইলে হয় ।” I বাবা তো একেবারে হতবন্ধি। মনে লেশমাত্র সন্দেহ রহিল না যে, হৈমই এইরুপ অভূতপবে পধায় আমাকে প্রবতিত করিয়াছে। তখনই তিনি উঠিয়া অন্তঃপরে গিয়া হৈমকে জিজ্ঞাসা করিলেন, "বলি বউমা, তোমার অসুখটা কিসের ।” হৈম বলিল, “অসুখ তো নাই।” বাবা ভাবিলেন, এ উত্তরটা তেজ দেখাইবার জন্য। কিন্তু, হৈমর শরীরও যে দিনে দিনে শুকাইয়া যাইতেছিল তাহা আমরা প্রতিদিনের অভ্যাসবশতই বুঝি নাই। একদিন বনমালীবাব তাহাকে দেখিয়া চমকিয়া উঠিলেন, “অ্যাঁ, এ কাঁ। হৈমী, এ কেমন চেহারা তোর! অসুখ করে নাই তো ?” হৈম কহিল, “না।” এই ঘটনার দিন-দশেক পরেই, বলা নাই, কহা নাই, হঠাৎ আমার বশীর আসিয়া উপস্থিত। হৈমর শরীরের কথাটা নিশ্চয় বনমালীবাব তাঁহাকে লিখিয়াছিলেন। বিবাহের পর বাপের কাছে বিদায় লইবার সময় মেয়ে আপনার আশ্রম চাপিয়া নিয়াছিল। এবার মিলনের দিন বাপ যেমনি তাহার চিবকে ধরিয়া মুখটি তুলিয়া ধরিলেন অমনি হৈমর চোখের জল আর মানা মানিল না। বাপ একটি কথা বলিতে পারিলেন না; জিজ্ঞাসা পর্যন্ত করিলেন না কেমন আছিস । আমার বশরে তাঁহার মেয়ের মুখে এমন-একটা কিছ দেখিয়াছিলেন যাহাতে তাঁহার বকে ফাটিয়া গেল। হৈম বাবার হাত ধরিয়া তাঁহাকে শোবার ঘরে লইয়া গেল। অনেক কথা যে জিজ্ঞাসা করিবার আছে। তাহার বাবারও যে শরীর ভালো দেখাইতেছে না ! বাবা জিজ্ঞাসা করিলেন, “বড়ি, আমরা সঙ্গে যাবি ?” হৈম কাণ্ডালের মতো বলিয়া উঠিল, “যাব।” বাপ বলিলেন, “আচ্ছা, সব ঠিক করিতেছি।” শবশীর যদি অত্যন্ত উদবিগ্ন হইয়া না থাকিতেন তাহা হইলে এ বাড়িতে ঢকিয়াই বঝিতে পারিতেন, এখানে তাঁহার আর সে দিন নাই। হঠাৎ তাঁহার আবিভাবকে উপদ্রব মনে করিয়া বাবা তো ভালো করিয়া কথাই কহিলেন না । আমার বশরের মনে ছিল তাঁহার বেহাই একদা তাঁহাকে বারবার করিয়া আশ্বাস দিয়াছিলেন যে, যখন তাঁহার খুশি মেয়েকে তিনি বাড়ি লইয়া যাইতে পারবেন। এ সত্যের অন্যথা হইতে পারে সে কথা তিনি মনেও আনিতে পারেন নাই। বাবা তামাক টানিতে টানিতে বলিলেন, “বেহাই, আমি তো কিছু বলিতে পারি না, একবার তা হলে বাড়ির মধ্যে—” বাড়ির-মধ্যের উপর বরাত দেওয়ার অর্থ কী আমার জানা ছিল। বুঝিলাম, কিছর হইবে না। কিছদ হইলও না। বউমার শরীর ভালো নাই! এত বড়ো অন্যায় অপবাদ ! শবশরেমশায় স্বয়ং একজন ভালো ডাক্তার আনিয়া পরীক্ষা করাইলেন। ডান্তার বলিলেন, “রায়-পরিবতন আবশ্যক, নহিলে হঠাৎ একটা শক্ত ব্যামো হইতে পারে।” বাবা হাসিয়া কহিলেন, “হঠাৎ একটা শক্ত ব্যামো তো সকলেরই হইতে পারে।