পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(以 গল্পগুচ্ছ জলিখা ছদ্মবেশে নানা থানে ভ্রমণ করিয়া অবশেষে আমিনার সন্ধান পাইয়া কী করিয়া ধীবরের কুটিরে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে সে-সমস্ত কথা বলিতে গেলে দ্বিতীয় আর-একটি কাহিনী হইয়া পড়ে। তাহার রক্ষাকতা রহমত শেখ ছদ্মনামে আরাকান-রাজসভায় কাজ করিতেছে । দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ ছোটো নদীটি বহিয়া যাইতেছিল, এবং প্রথম গ্রীষ্মের শীতল প্রভাতবায়তে কৈলন গাছের রক্তবণ পাপমঞ্জরী হইতে ফলে ঝরিয়া পড়িতেছিল। গাছের তলায় বসিয়া জলিখা আমিনাকে কহিল, "ঈশ্বর যে আমাদের দুই ভগ্নীকে মৃত্যুর হাত হইতে রক্ষা করিয়াছেন, সে কেবল পিতার হত্যার প্রতিশোধ লইবার জন্য। নহিলে, আর তো কোনো কারণ খ:জিয়া পাই না।” আমিনা নদীর পরপারে সবাপেক্ষা দরবতী, সবাপেক্ষা ছাযময়, বনশ্রেণীর দিকে দটি মেলিয়া ধীরে ধীরে কহিল, "দিদি, আর ও-সব কথা বলিস নে, ভাই। আমার এই পৃথিবীটা একরকম বেশ লাগিতেছে। মরিতে চায় তো পােবনষগুলো কাটাকাটি করিয়া মরকে গে, আমার এখানে কোনো দুঃখ নাই।” জলিখা বলিল, “ছি ছি আমিনা, তুই কি শাহজাদাব ঘরের মেযে কোথায় দিল্লির সিংহাসন, আর কোথায় আরাকানের ধীবরের কুটির ” আমিনা হাসিয়া কহিল, “দিদি, দিল্লির সিংহাসনের চেয়ে অমাব বঢ়াব এই কুটির এবং এই কৈল গাছের ছায়া যদি কোনো বালিকার বেশি ভালো লাগে, তাহাতে দিল্লির সিংহাসন একবিন্দ আশ্রপাত করিবে না।” জলিখা কতকটা আনমনে কতকটা আমিনাকে কহিল, "তা, তোক দোষ দেওয়া যায় না, তুই তখন নিতান্ত ছোটো ছিলি। কিন্তু একবার ভাবিয়া দেখা, পিতা তোকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসিতেন বলিয়া তোকেই স্বহস্তে জলে ফেলিয়া দিয়াছিলেন । সেই পিতৃদত্ত মৃত্যুর চেয়ে এই জীবনকে বেশি প্রিয জ্ঞান কবিস না। তবে যদি প্রতিশোধ তুলিতে পারিস তবেই জীবনের অর্থ থাকে।" আমিনা চুপ করিয়া দরে চাহিয়া রহিল, কিন্তু বেশ বন্মো গেল, সকল কথা সত্ত্বেও বাহিরের এই বাতাস এবং গাছের ছায়া এবং আপনার নবযৌবন এবং কী একটা সুখসমৃতি তাহাকে নিমগ্ন করিযা রাখিয়াছিল। কিছুক্ষণ পরে একটা দীঘনিশবাস ফেলিয়া কহিল, "দিদি, তুমি একট অপেক্ষা করো ভাই। আমার ঘরের কাজ বাকি আছে। আমি না রধিয়া দিলে পঢ়া খাইতে পাইবে না।” তৃতীয় পরিচ্ছেদ জলিখা আমিনার অবস্থা চিন্তা করিয়া ভারি লিমষ হইয়া চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। এমন সময় হঠাৎ ধােপ করিয়া একটা লফের শব্দ হইল এবং পশচাং হইতে কে একজন জলিখার চোখ টিপিয়া ধরিল।