পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সল্লীর পত্র তোমরা ভয় দেখালে, “বিন্দর শ্বশুরবাড়ির লোকে পলিস-কেস করলে মশকিলে পড়তে হবে।” আমি বললাম, “ফকি দিয়ে পাগল বরের সঙ্গে ওর বিয়ে দিয়েছে এ কথা কি আদালত শুনবে না।” তোমরা বললে, “তবে কি এই নিয়ে আদালত করতে হবে নাকি । কেন, আমাদের দায় কিসের ।” আমি বললাম, “আমি নিজের গয়না বেচে বা করতে পারি করব।” তোমরা বললে, “উকিলবাড়ি ছটবে নাকি।” এ কথার জবাব নেই। কপালে করাঘাত করতে পারি, তার বেশি আর কী করব। ও দিকে বিন্দর শ্বশুরবাড়ি থেকে ওর ভাসরে এসে বাইরে বিষম গোল বাধিয়েছে। সে বলছে, সে থানায় খবর দেবে। আমার যে কী জোর আছে জানি নে— কিন্তু, কসাইয়ের হাত থেকে যে গোর প্রাণভয়ে পালিয়ে এসে আমার আশ্রয় নিয়েছে তাকে পলিসের তাড়ায় আবার সেই কসাইয়ের হাতে ফিরিয়ে দিতেই হবে, এ কথা কোনোমতেই আমার মন মানতে পারল না। আমি পধা করে বললাম, “তা, দিক থানায় খবর।” এই বলে মনে করলাম, বিন্দকে এইবেলা আমার শোবার ঘরে এনে তাকে নিয়ে ঘরে তালাবন্ধ করে বসে থাকি। খোঁজ করে দেখি বিন্দ নেই। তোমাদের সঙ্গে আমার বাদপ্রতিবাদ যখন চলছিল, তখন বিন্দ: আপনি বাইরে গিয়ে তার ভাসরের কাছে ধরা দিয়েছে। বুঝেছে, এ বাড়িতে যদি সে থাকে তবে আমাকে সে বিষম বিপদে ফেলবে । মাঝখানে পালিযে এসে বিন্দ আপন দুঃখ আরও বাড়ালে। তার শাশুড়ির তক এই যে, তার ছেলে তো ওকে খেষে ফেলছিল না। মন্দ স্বামীর দৃষ্টান্ত সংসারে দলভ নয়। তাদেব সঙ্গে তুলনা করলে তার ছেলে ষে সোনার চাঁদ । আমার বড়ো জা বললেন, “ওর পোড়া কপাল, তা নিয়ে দুঃখ করে কী করব। তা পাগল হোক, ছাগল হোক, স্বামী তো বটে!” কুঠিরোগীকে কোলে করে তার সতী বেশ্যার বাড়িতে নিজে পৌঁছে দিয়েছে, সতীসাধনীর সেই দশটাত তোমাদের মনে জাগছিল। জগতের মধ্যে অধমতম কাপর্ষতার এই গল্পটা প্রচার করে আসতে তোমাদের পরিষের মনে আজ পর্যন্ত একটাও সংকোচ বোধ হয় নি; সেইজনাই মানবজন্ম নিয়েও বিন্দর ব্যবহারে তোমরা রাগ করতে পেরেছ, তোমাদের মাথা হেট হয় নি। বিন্দর জন্যে আমার বকে ফেটে গেল, কিন্তু তোমাদের জন্যে আমার লজার সীমা ছিল না। আমি তো পাড়াগেরে এমন বন্ধি দিলেন । তোমাদের এই-সব ধমের কথা আমি যে কিছুতেই সইতে পারলাম না। আমি নিশ্চয় জানতুম, মরে গেলেও বিন্দ আমাদের ঘরে আর আসবে না। কিন্তু, আমি যে তাকে বিয়ের আগের দিন আশা দিয়েছিলাম যে তাকে শেষ পর্যন্ত ত্যাগ করব না। আমার ছোটো ভাই শরৎ কলকাতায় কলেজে পড়ছিল। তোমরা জানই তো যত রকমের ভলণ্টিয়ারি করা, পেলগের পাড়ার ইন্দরে মারা, দামোদরের বন্যায় 88