পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাইফোঁটা - も切"○。 আসিতে লাগিল । একটা কথা আছে—বিদ্যা যতই বাড়ে ততই জানা যায় যে, কিছুই জানি না। টাকারও সেই দশা। টাকা যতই বাড়ে ততই মনে হয়, টাকা নাই বলিলেই হয়। আমার মনের সেইরকম অবস্থায় প্রসন্ন বলিল— ঠিক যে বলিল তাহা নয়, আমাকে দিয়া বলাইয়া লইল যে, খুচরা-দোকানদারির কাজে জীবন দেওয়াটা জীবনের বাজে খরচ । পথিবী জড়িয়া যে-সব ব্যাবসা সেই তো ব্যাবসা। দেশের ভিতরেই যে টাকা খাটে সে টাকা ঘানির বলদের মতো অগ্রসর হয় না, কেবল ঘুরিয়া মরে। প্রসন্ন এমনি ভক্তিতে গদগদ হইয়া উঠিল যেন এমন নতন অথচ গভীর জ্ঞানের কথা সে জীবনে আর কখনো শোনে নাই। তার পরে আমি তাকে ভারতবষে* তিসির ব্যাবসার সাত বছরের হিসাব দেখাইলাম। কোথায় তিসি কত পরিমাণে যায় ; কোথায় কত দর; দর সব চেয়ে উঠেই বা কত, নামেই বা কত ; মাঠে ইহার দাম কত, জাহাজের ঘাটে ইহার দাম কত ; চাষাদের ঘর হইতে কিনিয়া একদম সমুদ্রপারে চালান করিতে পারিলে এক লফে কত লাভ হওয়া উচিত— কোথাও বা তাহা রেখা কাটিয়া, কোথাও বা তাহা শতকরা হিসাবের অঙ্কে ছকিয়া, কোথাও বা অনন্লোম-প্রণালীতে, কোথাও বা প্রতিলোম-প্রণালীতে, লাল এবং কালো কালীতে, অতি পরিকার অক্ষরে লবা কাগজের পাঁচ-সাত পাঠা ভতি করিয়া যখন প্রসন্নর হাতে দিলাম তখন সে আমার পায়ের ধলো লইতে যায় আর-কি। সে বলিল, “মনে বিশ্বাস ছিল, আমি এ-সব কিছু কিছু বুঝি ; কিন্তু আজ হইতে দাদা, তোমার সাকরেদ হইলাম।” আবার একট প্রতিবাদও করিল। বলিল, “যো ধ্ৰুবাণি পরিত্যজা— মনে আছে তো ? কী জানি, হিসাবে ভুল থাকিতেও পারে।” আমার রোথ চড়িয়া গেল। ভুল যে নাই কাগজে কাগজে তাহার অকাট্য প্রমাণ বাড়িয়া চলিল লোকসান যত প্রকারের হইতে পারে সমস্তকে সার বধিয়া খাড়া করিয়াও, মনফাকে কোনোমতেই শতকরা বিশ-প’চিশের নীচে নামাইতে পারা গেল না । এমনি করিয়া দোকানদারির সর খাল বাহিয়া কারবারের সমুদ্রে গিয়া যখন পড়া গৈল তখন যেন সেটা নিতান্ত আমারই জেদ-বশত ঘটিল, এমনি একটা ভাব দেখা দিল। দায়িত্ব আমারই । একে দত্তবংশের সততা, তার উপরে সদের লোভ: গচ্ছিত টাকা ফাঁপিয়া উঠিল। মেয়েরা গহনা বেচিয়া টাকা দিতে লাগিল । কাজে প্রবেশ করিয়া আর দিশা পাই না। পল্যানে যেগুলো দিব্য লাল এবং কালো কালীর রেখায় ভাগ করা কাজের মধ্যে সে বিভাগ খুজিয়া পাওয়া দায়। আমার প্ল্যানের রসভঙ্গ হয়, তাই কাজে সাখ পাই না। অন্তরাত্মা পাট বকিতে লাগিল, কাজ করিবার ক্ষমতা আমার নাই; অথচ সেটা কবলে করিবার ক্ষমতাও আমার নাই। কাজটা স্বভাবত প্রসন্নর হাতেই পড়িল, অথচ আমিই যে কারবারের হতীকতা বিধাতা এ ছাড়া প্রসন্নর মুখে আর কথাই নাই। তার মতলব এবং আমার স্বাক্ষর, তার দক্ষতা এবং আমার পৈতৃক খাতি, এই দইয়ে মিলিয়া ব্যাবসাটা চার পা তুলিয়া যে কোন পথে ছটিতেছে ঠাহর করিতেই পারলাম না।