পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

नाद्विनम्ना dషి চতুর্থ পরিচ্ছেদ আশ্চর্য এই দালিয়ার আসা-যাওয়া সম্বন্ধে জলিখার ক্ৰমে আর আপত্তি রহিল না। ভাবিয়া দেখিলে ইহাতে আশচয নাই। কারণ, নদীর যেমন এক দিকে স্রোত এবং আর-এক দিকে কল, রমণীর সেইরাপ হৃদয়াবেগ এবং লোকলজা। কিন্তু, সভ্যসমাজের বাহিরে আরাকানের প্রান্তে এখানে লোক কোথায় । এখানে কেবল ঋতুপর্যায়ে তর: মঞ্জরিত হইতেছে এবং সম্মুখে নীলা নদী বর্ষায় সফীত, শরতে স্বচ্ছ এবং গ্রীষ্মে ক্ষীণ হইতেছে; পাখির উচ্ছসিত কণ্ঠস্বরে সমালোচনার লেশমাত্র নাই; এবং দক্ষিণবায় মাঝে-মাঝে পরপারের গ্রাম হইতে মানবচক্লের গঞ্জনধৰনি বহিয়া আনে, কিন্তু কানাকানি আনে না। পতিত অট্রলিকার উপরে ক্ৰমে যেমন অরণ্য জন্মে, এখানে কিছুদিন থাকিলে সেইরুপ প্রকৃতির গোপন আক্ৰমণে লৌকিকতার মানবনিমিত দৃঢ় ভিত্তি ক্ৰমে অলক্ষিতভাবে ভাঙিয়া যায় এবং চতুদিকে প্রাকৃতিক জগতের সহিত সমস্ত একাকার হইয়া আসে । দুটি সমযোগ্য নরনারীর মিলনদশ্য দেখিতে রমণীর যেমন সন্দের লাগে এমন আর কিছু নয়। এত রহস্য, এত সখে, এত অতলপশ কৌতুহলের বিষয় তাহার পক্ষে আর-কিছুই হইতে পারে না। অতএব এই ববীর কুটিরের মধ্যে নিজন দারিদ্র্যর ছায়ায় যখন জলিখার কুলগব এবং লোকমযাদার ভাব আপনিই শিথিল হইযা আসিল তখন পপিত কৈলতরঙ্গচ্ছায়ে আমিনা এবং দালিয়ার মিলনের এই এক মনোহর খেলা দেখিতে তাহার বড়ো আনন্দ হইত । বোধ করি তাহারও তরুণ হৃদয়ের একটা অপরিতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা জাগিয়া উঠিত এবং তাহাকে সুখে দুঃখে চঞ্চল করিয়া তুলিত। অবশেষে এমন হইল, কোনোদিন যুবকের আসিতে বিলম্ব হইলে আমিনা যেমন উৎকণ্ঠিত হইয়া থাকিত জলিখাও তেমনি আগ্রহের সহিত প্রতীক্ষা করিত ; এবং উভয়ে একত্র হইলে, চিত্রকর নিজের সদ্যসমাপ্ত ছবি ঈষৎ পরে হইতে যেমন করিয়া দেখে, তেমনি করিয়া সলেহে সহাস্য নিরীক্ষণ করিয়া দেখিত । কোনো কোনো দিন মৌখিক ঝগড়াও করত, ছল করিষা ভং‘সনা করিত, আমিনকে গহে রাধ করিয়া যবেকের মিলনাবেগ প্রতিহত করিত। সম্রাট এবং আরণের মধ্যে একটা সাদৃশ্য আছে। উভয়ে বাধীন, উভযেই লরাজ্যের একাধিপতি, উভয়কেই কাহারও নিয়ম মানিষা চলিতে হয় না । উভয়ের মধ্যেই প্রকৃতির একটা স্বাভাবিক কহন্তু এবং সরলতা আছে। যাহারা মাঝারি, যাহারা দিনরাতি লোকশাস্টের অক্ষর মিলাইয়া জীবন যাপন করে, তাহারাই কিছু স্বতন্ত্র গাছের হয়। তাহাবাই বড়োর কাছে দাস, ছোটোর কাছে প্রভু এবং অস্থানে নিতান্ত কিংকত ব্যবিমুঢ় হইয়া দাঁড়ায় । বকর দালিয়া প্রকৃতি-সমাজ্ঞীর উচ্ছsথল ছেলে, শাহজাদীর কাছে কোনো সংকোচ ছিল না, এবং শাহজাদীরাও তাহাকে সমকক্ষ লোক বলিয়া চিনিতে পারিত। সহাসা, সরল, কৌতুকপ্রিয়, সকল অবস্থাতেই নিভীক, অসংকুচিত তাহার চরিত্রে দারিদ্রোর কোনো লক্ষণই ছিল না। কিন্তু এই-সকল খেলার মধ্যে এক-একবার জলিখার হদয়টা হায়-হায় করিয়া উঠিত, ভাবিত- সমাটপত্রীর জীবনের এই কি পরিণাম! একদিন প্রাতে দালিয়া আসিবামান্ত জলিখা তাহার হাত চাপিয়া কহিল, “দালিয়া,