পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

a Rも 帖 গল্পগুচ্ছ ধটি নৈমিষারণ্য আবিস্কার করিয়াছে। এই আবিস্কারটা যে সত্য তার প্রধান প্রমাণ, ইহা কৃষ্ণপ্রতিপদের ভোরবেলায় স্বপেন প্রকাশ পাইয়াছে। স্বয়ং সরস্বতী ফাঁস করিয়া দিয়াছেন। তিনি যদি নিজবেশে আসিয়া আবিভূত হইতেন তাহা হইলে বরঞ্চ সন্দেহের কারণ থাকিত—কিন্তু, তিনি তাঁর আশ্চর্য দেবীলীলায় হাঁড়িচাঁচা পাখি হইয়া দেখা দিলেন। পাখির লেজে তিনটি মাত্র পালক ছিল— একটি সাদা, একটি সবুজ, মাঝেরটি পাটকিলে। এই পালক তিনটি ষে সত্ত্ব রজ তম, ঋক যজঃ সাম, সন্টি স্থিতি প্রলয়, আজ কাল পরশ প্রভৃতি যে তিন সংখ্যার ভেল্কি লইয়া এই জগৎ তাহারই নিদশন তাহাতে সন্দেহ ছিল না। তার পর হইতে এই নৈমিষারণ্যে যোগী তৈরি হইতেছে। দুইজন এম.এস.সি. ক্লাসের ছেলে কলেজ ছাড়িয়া এখানে যোগ অভ্যাস করেন ; একজন সাবজজ তাঁর সমস্ত পেন্সেন এই নৈমিষারণ্য-ফন্ডে উৎসগা করিয়াছেন এবং তাহার পিতৃমাতৃহীন ভাগনেটিকে এখানকার যোগী ব্রহমচারীদের সেবার জন্য নিযন্তে করিয়া দিয়া মনে আশ্চর্য শান্তি পাইয়াছেন। এই নৈমিষারণ্য হইতে ষোড়শীর জন্য যোগ-অভ্যাসের শিক্ষক পাওয়া গেল। সতরাং মাখনকে নৈমিষারণ্য-কমিটির গহী-সভ্য হইতে হইল। গহী-সভোর কতবা, নিজের আয়ের ষষ্ঠ অংশ সন্ন্যাসী-সভ্যদের ভরণপোষণের জন্য দান করা। গহীসভ্যদের শ্রদ্ধার পরিমাণ-অনুসারে এই ষষ্ঠ অংশ অনেক সময় থামোমিটরের পারার মতো সত্য অঙ্কটার উপরে নীচে উঠানামা করে । অংশ কষিবার সময় মাখনেরও ঠিকে ভুল হইতে লাগিল। সেই ভুলটার গতি নীচের অঙ্কের দিকে । কিন্তু, এই ভুলচুকে নৈমিষারণ্যের যে ক্ষতি হইতেছিল ষোড়শী তাহা পরেণ করিয়া দিল । ষোড়শীর গহনা আর বড়োকিছ বাকি রহিল না এবং তার মাসহারার টাকা প্রতি মাসে সেই অন্তহিত গহনাগুলোর অনুসরণ করিল। বাড়ির ডাক্তার অনাদি আসিয়া মাখনকে কহিলেন, “দাদা, করছ কী । মেয়েটা যে মারা যাবে।” মাখন উদবিগ্ন মুখে বলিলেন, "তাই তো, কী করি।” ষোড়শীর কাছে তাঁর আর সাহস নাই। এক সময়ে অত্যন্ত মদম্বরে তাকে আসিয়া বলিলেন, “মা, এত অনিয়মে কি তোমার শরীর টি-কবে ।” ষোড়শী একটখানি হাসিল। তার মমাথ এই এমন-সকল ব্যথা উদবেগ সংসার’ বিষয়ী লোকেরই যোগ্য বটে। ළු বরদা চলিয়া যাওয়ার পরে বারো বৎসর পার হইয়া গেছে ; এখন ষোড়শীয় বয়স পাঁচশ। একদিন ষোড়শী তার যোগী শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করিল, “বাবা, আমার স্বামী জীবিত আছেন কি না তা আমি কেমন করে জানব।” যোগী প্রায় দশ মিনিট কাল স্তৰ হইয়া চোখ বজিয়া রহিলেন; তার পরে চোখ খালিয়া বলিলেন, “জীবিত আছেন।” “কেমন করে জানলেন ।” “সে কথা এখনো তুমি বাকবে না। কিন্তু, এটা নিশ্চয় জেনো, পীলোক হরেও