পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পয়লা নশবর අ ෆළු আমার বাড়ির ঠিক পাশেই অকস্মাৎ এত বড়ো একটা আবির্ভাব আমি হয়তো জানতেই পারতুম না। কারণ, কণ যেমন একটি সহজ কবচ গারে দিয়েই পথিবীতে এসেছিলেন আমারও তেমনি একটি বিধিদত্ত সহজ কবচ ছিল। সেটি হচ্ছে আমার স্বাভাবিক অন্যমনস্কতা। আমার এ বমটি খুব মজবুত ও মোটা। অতএব, সচরাচর পৃথিবীতে চারি দিকে যে-সকল ঠেলাঠেলি গোলমাল গালমন্দ চলতে থাকে তার থেকে আত্মরক্ষা করবার উপকরণ আমার ছিল। কিন্তু, আধুনিক কালের বড়োমানষেরা স্বাভাবিক উৎপাতের চেয়ে বেশি, তারা অস্বাভাবিক উৎপাত। দ্য হাত, দ পা, এক মন্ডে যাদের আছে তারা হল মানব; যাদের হঠাৎ কতকগুলো হাত পা মাথা মণ্ড বেড়ে গেছে তারা হল দৈত্য। অহরহ দন্দাড় শব্দে তারা আপনার সীমাকে ভাঙতে থাকে এবং আপন বাহুল্য দিয়ে সবগমতাঁকে অতিষ্ঠ করে তোলে। তাদের প্রতি মনোযোগ না দেওয়া অসম্ভব । যাদের পরে মন দেবার কোনোই প্রয়োজন নেই অথচ মন না দিয়ে থাকবারও জো নেই তারাই হচ্ছে জগতের অস্বাস্থ্য, স্বয়ং ইন্দ্র পর্যন্ত তাদের ভয় করেন। মনে বুঝলম, সিতাংশমৌলি সেই দলের মানুষ । একা একজন লোক যে এত বেজায় অতিরিক্ত হতে পারে তা আমি পাবে জানতুম না। গাড়ি-ঘোড়া লোক-লস্কর নিয়ে সে যেন দশ-মন্ডে বিশ-হাতের পালা জমিয়েছে। কাজেই তার জবালায় আমার সরস্বত সবগ'লোকটির বেড়া রোজ ভাঙতে লাগল। তার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় আমাদের গলির মোড়ে। এ গলিটার প্রধান গণে ছিল এই যে, আমার মতো আনমনা লোক সামনের দিকে না তাকিয়ে, পিঠের দিকে মন না দিয়ে, ডাইনে বীয়ে ভক্ষেপমাত্র না ক’বেও এখানে নিরাপদে বিচরণ করতে পারে। এমন-কি, এখানে সেই পথ-চলতি অবস্থায় মেরেডিথের গল্প, বাউনিঙের কাব্য অথবা আমাদের কোনো আধুনিক বাঙালি কবির রচনা সম্বন্ধে মনে মনে বিতক করেও অপঘাত-মৃত্যু বাঁচিয়ে চলা যায়। কিন্তু, সেদিন খামকা একটা প্রচণ্ড হেইয়ো গজ’ন শুনে পিঠের দিকে তাকিয়ে দেখি, একটা খোলা ব্রাহাম গাড়ির প্রকাণ্ড একজোড়া লাল ঘোড়া আমার পিঠের উপর পড়ে আর-কি ! যাঁর গাড়ি তিনি স্বয়ং হাঁকাচ্ছেন, পাশে তাঁর কোচম্যান বসে। বাব সবলে দুই হাতে রাশ টেনে ধরেছেন। আমি কোনোমতে সেই সংকীর্ণ গলির পাশ্ববতী একটা তামাকের দোকানের হটি অকিড়ে ধরে আত্মরক্ষা করলাম। দেখলাম, আমার উপর বাব কন্ধে ! কেননা, যিনি অসতকভাবে রথ হাঁকান অসতক পদাতিককে তিনি কোনোমতেই ক্ষমা করতে পারেন না। এর কারণটা পবেই উল্লেখ করেছি। পদাতিকের দটি মাত্র পা, সে হচ্ছে স্বাভাবিক মানুষ। আর, যে ব্যক্তি জড়ি হাঁকিয়ে ছোটে তার আট পা: সে হল দৈত্য। তার এই অস্বাভাবিক বাহুলোর বারা জগতে সে উৎপাতের সন্টি করে। দই-পা-ওয়ালা মানুষের বিধাতা এই আট-পা-ওয়ালা আকস্মিকটার জন্যে প্রস্তুত ছিলেন না। স্বভাবের স্বাস্থ্যকর নিয়মে এই অশ্ববরথ ও সারথি সবাইকেই যথাসময়ে ভুলে যেতুম। কারণ, এই পরমাশ্চর্য জগতে এরা বিশেষ করে মনে রাখবার জিনিস নয়। কিন্তু, প্রত্যেক মানুষের যে পরিমাণ গোলমাল করবার স্বাভাবিক বরাদ আছে এরা তার চেয়ে ঢের বেশি জবর দখল করে বসে আছেন। এইজন্যে যদিচ ইচ্ছা করলেই