পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

やり8 গল্পগুচ্ছ হাড় যে তাহারই মধ্যে ছিল। আমার ছাব্বিশ বৎসরের যৌবন যে তাহার চারি দিকে বিকশিত হইয়াছিল— একবার দেখিতে ইচ্ছা করে না ?” আমি তৎক্ষণাং বলিলাম, "হাঁ, কথাটা সংগত বটে। তা, তুমি সন্ধান করো গে যাও। আমি একটা ঘনমাইবার চেষ্টা করি।” সে বলিল, “তুমি একলা আছ বুঝি ? তবে একটা বসি। একটা গল্প করা যাক। পয়ত্রিশ বৎসর পাবে আমিও মানুষের কাছে বসিয়া মানুষের সঙ্গে গলপ করিতাম। এই পয়ত্ৰিশটা বৎসর আমি কেবল শ্মশানের বাতাসে হহে শব্দ করিয়া বেড়াইয়াছি। আজ তোমার কাছে বসিয়া আর-একবার মানুষের মতো করিয়া গল্প করি।” অনুভব করিলাম, আমার মশারির কাছে কে বসিল। নিরপোয় দেখিয়া আমি বেশ-একট উৎসাহের সহিত বলিলাম, "সেই ভালো। যাহাতে মন বেশ প্রফুল্ল হইয়া উঠে এমন একটা-কিছ গল্প বলো।” সে বলিল, “সবচেয়ে মজার কথা যদি শুনিতে চাও তো আমাক জীবনের কথা दळि ।” গিজার ঘড়িতে ঢং ঢং করিয়া দুটা বাজিল । “যখন মানুষ ছিলাম এবং ছোটো ছিলাম তখন এক ব্যক্তিকে যমেব মতো ভয় করিতাম। তিনি আমার স্বামী । মাছকে বাড়শি দিযা ধরিলে তাহার যেমন মনে হয় আমারও সেইরূপ মনে হইত। অর্থাং কোন-এক সম্পণে অপরিচিত জীব ষেন বাড়শিতে গাঁথিয়া আমাকে আমার সিনগধগভীর জন্মজলাশয় হইতে টান মারিয়া ছিনিয়া লইয়া যাইতেছে— কিছুতে তাহার হাত হইতে পরিত্রাণ নাই। বিবাহেব দুই মাস পরেই আমার স্বামীব মৃত্যু হইল এবং আমার আত্মীযসবজনেরা আমাক হইয়া অনেক বিলাপ-পরিতাপ করিলেন। আমার বশর অনেকগুলি লক্ষণ মিলাইয়া দেখিয়া শাশুড়িকে কহিলেন, ‘শাস্ত্রে যাহাকে বলে বিষকন্যা এ মেযেটি তাই । সে কথা আমার পষ্ট মনে আছে — শুনিতেছ ? কেমন লাগিতেছে।” আমি বলিলাম, “বেশ। গল্পেব আরম্ভটি বেশ মজার ।” “তবে শোনো । আনন্দে বাপের বাড়ি ফিরিযা আসিলাম । কম বয়স বাড়িতে লাগিল। লোকে আমার কাছে লুকাইতে চেষ্টা করিত, কিন্তু আমি নিজ বেশ জানিতাম, আমার মতো রুপসী এমন যেখানে-সেখানে পাওয়া যায় না – তোমার কী মনে হয় ।” “খবে সম্ভব। কিন্তু আমি তোমাকে কখনো দেখি নাই ।” “দেখো নাই ! কেন । আমার সেই কঙ্কাল। হি হি হি হি । আমি ঠাট্টা করিতেছি । তোমার কাছে কী করিয়া প্রমাণ করিব যে, সেই দটো শনা চক্ষুকোটরের মধ্যে বড়ো বড়ো টানা দটি কালো চোখ ছিল এবং রাঙা ঠোঁটের উপরে যে মদ হাসিটকু মাখানো ছিল এখনকার অনাবত দন্তসার বিকট হাসের সঙ্গে তার কোনো তুলনাই হয় না; এবং সেই কয়খানা দীঘ শকে অস্থিখন্ডের উপর এত লালিত্য এত লাবণ্য, যৌবনের এত কঠিন-কোমল নিটোল পরিপণতা প্রতিদিন প্ৰফটিত হইয়া উঠিতেছিল, তোমাকে তাহা বলিতে গেলে হাসি পায় এবং রাগও ধরে। আমার সেই শরীর হইতে যে অস্থিবিদ্যা শেখা যাইতে পারে তাহা তখনকার বড়ো বড়ো ডান্তারেরাও বিশ্ববাস করিত না। আমি জানি, একজন ডাক্তার তাঁহার কোনো বিশেষ বন্ধর কাছে