পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কঙ্কাল も)○ আমাকে কনকচাঁপা বলিয়াছিলেন। তাহার অর্থ এই, পথিবীর আর-সকল মনুষ্যই অস্থিবিদ্যা এবং শরীরতত্ত্বের দন্টান্তস্থল ছিল, কেবল আমিই সৌন্দযর পৗ ফলের মতো ছিলাম। কনকচাঁপার মধ্যে কি একটা ককাল আছে। “আমি যখন চলিতাম তখন আপনি বুঝিতে পারিতাম যে, একখণ্ড হীরা নড়াইলে তাহার চারি দিক হইতে যেমন আলো ঝকমক করিয়া উঠে আমার দেহের প্রত্যেক গতিতে তেমনি সৌন্দয্যের ভঙ্গি নানা স্বাভাবিক হিল্লোলে চারি দিকে ভাঙিয়া পড়িত। আমি মাঝে মাঝে অনেক ক্ষণ ধরিয়া নিজের হাত দুখানি নিজে দেখিতাম— পথিবীর সমস্ত উদ্ধত পৌরুষের মুখে রাশ লাগাইয়া মধরভাবে বাগাইয়া ধরিতে পারে, এমন দইখানি হাত। সভদ্রা যখন অজনকে লইয়া দপ্ত ভঙ্গিতে আপনার বিজয়রথ বিসিমত তিন লোকের মধ্য দিয়া চালাইয়া লইয়া গিয়াছিলেন, তাহার বোধ করি এইরুপ দুখানি অস্থলে সডোল বাহন, আরস্ত করতল এবং লাবণ্যশিখার মতো আগলি ছিল। “কিন্তু আমার সেই নিলাজ নিরাবরণ নিরাভরণ চিরবন্ধ কঙ্কাল তোমার কাছে আমার নামে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়াছে। আমি তখন নিরপোয় নিরত্তের ছিলাম। এইজন্য পথিবীর সবচেয়ে তোমার উপর আমার বেশি রাগ। ইচ্ছা করে, আমার সেই ষোলো বৎসরের জীবন্ত, যৌবনতাপে উত্তপত আরন্তিম রংপখানি একবার তোমার চোখের সামনে দড়ি করাই, বহকালের মতো তোমার দুই চক্ষের নিদ্রা ছটাইয়া দিই, তোমার অশ্বিবিদ্যাকে অস্থির করিয়া দেশছাড়া করি।” আমি বলিলাম, “তোমার গা যদি থাকিত তো গা ছ:ইয়া বলিতাম, সে বিদ্যার লেশমাত্র আমার মাথায় নাই। আর, তোমার সেই ভুবনমোহন পণ যৌবনের রপ রজনীর অন্ধকারপটের উপরে জাজবল্যমান হইয়া ফুটিয়া উঠিয়াছে। আর অধিক বলিতে হইবে না।” “আমার কেহ সঙ্গিনী ছিল না। দাদা প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন, বিবাহ করবেন না। অন্তঃপারে আমি একা। বাগানের গাছতলায় আমি একা বসিয়া ভাবিতম, সমস্ত পথিবী আমাকেই ভালোবাসিতেছে, সমসত তারা আমাকে নিরীক্ষণ করিতেছে, বাতাস ছল করিয়া বার বার দীর্ঘনিশবাসে পাশ দিয়া চলিয়া বাইতেছে এবং যে তৃণাসনে পা দুটি মেলিয়া বসিয়া আছি তাহার যদি চেতনা থাকিত তবে সে পনবার অচেতন হইয়া বাইত। পথিবীর সমস্ত যাবাপর্ষ ওই তুশপঞ্জরীপে দল বধিয়া নিস্তন্ধে আমার চরণবতী হইয়া দাঁড়াইয়াছে, এইরুপ আমি কল্পনা করিতাম : হৃদয়ে অকারণে কেমন বেদনা অনুভব হইত। তখন তিনিই আমাদের বাড়ির ডাক্তার হইলেন। আমি তাঁহাকে পাবে আড়াল হইতে অনেকবার দেখিয়াছি। দাদা অত্যন্ত অদ্ভুত লোক ছিলেন– পথিবীটাকে যেন ভালো করিয়া চোখ মেলিয়া দেখিতেন না। সংসারটা যেন তাঁহার পক্ষে যথেষ্ট ফাঁকা নয়— এইজনা সরিয়া সরিয়া একেবারে প্রান্তে গিয়া আশ্রয় লইয়াছেন। “তাঁহার বন্ধর মধ্যে এক শশিশেখর। এইজনা বাহিরের যবেকদের মধ্যে আমি এই শশিশেখরকেই সব দা দেখিতাম, এবং যখন আমি সন্ধ্যাকালে পাপতরতলে সমাজ্ঞীর আসন গ্রহণ করিতাম তখন পথিবীর সমস্ত পরষজাতি শশিশেখরের