পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(G গল্পগুচ্ছ এমনি করে মেয়েদের মধ্য দিয়ে পরষে আপনার পণতা পায়। এই তত্ত্বটা মমরিত শালবনে আমাকে আবিষ্ট করে ধরল। মনের সামনে আমার ভাবী বন্ধেবয়সের শেষপ্রান্ত পর্যন্ত তাকিয়ে দেখলাম— দেখে তার নিরতিশয় নীরসতায় হদয়টা হাহাকার করে উঠল। ঐ মরপথের মধ্য দিয়ে মনেফার বোঝা ঘাড়ে করে নিয়ে কোথায় গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে মরতে হবে! আর দেরি করলে তো চলবে না। সম্প্রতি চল্লিশ পেরিয়েছি— যৌবনের শেষ থলিটি ঝেড়ে নেবার জন্যে পঞ্চাশ রাস্তার ধারে বসে আছে, তার লাঠির ডগাটা এইখান থেকে দেখা যাচ্ছে। এখন পকেটের কথাটা বন্ধ রেখে জীবনের কথা একটুখানি ভেবে দেখা যাক। কিন্তু, জীবনের যে অংশে মলেতুবি পড়েছে সে অংশে আর তো ফিরে যাওয়া চলবে না। তব তার ছিন্নতায় তালি লাগাবার সময় এখনো সম্পণে যায় নি। এখান থেকে কাজের গতিকে পশ্চিমের এক শহরে যেতে হল। সেখানে বিশ্বপতিবাব ধনী বাঙালি মহাজন। তাঁকে নিয়ে আমার কাজের কথা ছিল। লোকটি খব হ:শিয়ার, সতরাং তাঁর সঙ্গে কোনো কথা পাকা করতে বিস্তর সময় লাগে। একদিন বিরক্ত হয়ে যখন ভাবছি 'একে নিয়ে আমার কাজের সুবিধা হবে না, এমন-কি, চাকরকে আমার জিনিসপত্র প্যাক করতে বলে দিয়েছি, হেনকালে বিশ্ববপতিবাব সন্ধ্যার সময় এসে আমাকে বললেন, “আপনার সঙ্গে নিশ্চয়ই অনেকরকম লোকের আলাপ আছে, আপনি একটা মনোযোগ করলে একটি বিধবা বেচে যায়।” ঘটনাটি এই – নন্দকৃষ্ণবাব বেরেলিতে প্রথমে আসেন একটি বাঙালি-ইংরাজি স্কুলের হেডমাস্টার হয়ে। কাজ করেছিলেন খুব ভালো। সকলেই আশ্চব হয়েছিল— এমন সযোগ্য সুশিক্ষিত লোক দেশ ছেড়ে, এত দুরে, সামান্য বেতনে চাকরি করতে এলেন কী কারণে। কেবল যে পরীক্ষা পাস করাতে তাঁর খ্যাতি ছিল তা নয়, সকল ভালো কাজেই তিনি হাত দিয়েছিলেন । এমন সময় কেমন করে বেরিয়ে পড়ল, তাঁর সত্রীর রপ ছিল বটে কিন্তু কুল ছিল না; সামান্য কোন জাতের মেয়ে, এমন-কি তাঁর ছোঁওয়া লাগলে পানীয় জলের পানীয়তা এবং অন্যান্য নিগঢ়ে সাত্ত্বিক গণে নষ্ট হয়ে যায়। তাঁকে যখন সবাই চেপে ধরলে তিনি বললেন, হাঁ, জাতে ছোটো বটে, কিন্তু তব সে তাঁর স্ত্রী। তখন প্রশ্ন উঠল, এমন বিবাহ বৈধ হয় কী করে। যিনি প্রশ্ন করেছিলেন নন্দকৃষ্ণবাব তাঁকে বললেন, “আপনি তো শালগ্রাম সাক্ষী করে পরে পরে দটি সন্ত্রী বিবাহ করেছেন, এবং বিবচনেও সন্তুষ্ট নেই তার বহর প্রমাণ দিয়েছেন। শালগ্রামের কথা বলতে পারি নে কিন্তু অন্তযামী জানেন, আমার বিবাহ আপনার বিবাহের চেয়ে বৈধ, প্রতিদিন প্রতি মহেনতে বৈধ—এর চেয়ে বেশি কথা আমি আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাই নে ৷” 書 যাকে নন্দকৃষ্ণ এই কথাগুলি বললেন তিনি খুশি হন নি। তার উপরে লোকের অনিষ্ট করবার ক্ষমতাও তাঁর অসামান্য ছিল। সতরাং সেই উপদ্রবে নন্দকৃষ্ণ বেরিলি ত্যাগ করে এই বৰ্তমান শহরে এসে ওকালতি শার করলেন। লোকটা অত্যন্ত খ:ংখতে ছিলেন-উপবাসী থাকলেও অন্যায় মকদ্দমা তিনি কিছুতেই নিতেন না। প্রথমটা তাতে তাঁর স্বত অসাবধা হোক, শেষকালে উন্নতি হতে লাগল। কেননা হাকিমরা তাঁকে সম্পর্শ বিশ্বাস করতেন। একখানি বাড়ি করে একটা জমিয়ে বসেছেন