পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԳՓ Ե গল্পগুচ্ছ ধম’জান নেই। কিন্তু, দোষ দেব কাকে। ইতিপবে অসখে-বিসুখে আমার সেবা করবার জন্যে পিসিমা তাকে অনেকবার উৎসাহিত করেছেন— আমিই বাধা দিয়ে বলেছি, ভালো লাগে না । পিসিমা বলেছেন, “অমিয়ার শিক্ষার জন্যেই বলছি, তোর আরামের জন্যে নয়।" আমি বলেছি, “হাসপাতালে নাসিং করতে পাঠাও-না।” পিসিমা রাগ করে আর জবাব করেন নি। আজ শয়ে শয়ে মনে মনে ভাবছি, নাহয় এক সময়ে বাধাই দিয়েছি, তাই বলে কি সেই বাধাই মানতে হবে। গরজেনের আদেশের পরে এত নিষ্ঠা এই কলিযুগে ! সাধারণত নিকট সংসারের ছোটোবড়ো অনেক ব্যাপারই দেশাত্মবোধীর চোখ এড়িয়ে যায়। কিন্তু, অসংখ করে পড়ে আছি বলে আজকাল দষ্টি হয়েছে প্রখর । লক্ষ্য করলেম, আমার অবতমানে অমিয়ারও দেশাত্মবোধ পাবে'র চেয়ে অনেক বেশি প্রবল হয়ে উঠেছে। ইতিপবে আমার দষ্টান্ত ও শিক্ষায় তার এত অভাবনীয় উন্নতি হয় নি। আজ অসহযোগের অসহ্য আবেগে সে কলেজ-ত্যাগিনী ; ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িযে বস্তৃতা করতেও তার হৎকম্প হয় না ; অন্যথাসদনের চাঁদার জন্যে অপরিচিত লোকের বাড়িতে গিয়েও সে কলি ফিরিয়ে বেড়ায় । এও লক্ষ্য করে দেখলেম, অনিল তার এই কঠিন অধ্যবসায় দেখে তাকে দেবী ব’লে ভক্তি করে-- ওর জন্মদিনে সেই ভাবেরই একটা ভাঙা ছন্দের স্তোত্র সে সোনার কালীতে ছাপিয়ে ওকে উপহার দিয়েছিল । আমাকেও ঐ ধরনের একটা-কিছু বানাতে হবে, নইলে অস,বিধা হচ্ছে । পিসিমাব আমলে চাকরবাকরগলো যথানিয়মে কাজ করত ; হাতের কাছে কাউকে না কাউকে পাওয়া যেত। এখন এক-“লাস জলের দরকার হলে আমার মেদিনীপুরবাসী শ্রীমান জলধরের অকস্মাৎ অভ্যাগমের প্রত্যাশায় চাতকের মতো তাকিয়ে থাকি ; সময় মিলিযে ওষুধ খাওয়া সম্বন্ধে নিজের ভোলা মনের পরেই একমাত্র ভরসা। আমার চিবদিনব নিয়মবিরদ্ধে হলেও রোগশয্যায় হাজিরে দেবার জন্যে অমিয়াকে দুই-একবার ডাকিয়ে এনেছি; কিন্তু দেখতে পাই, পায়ের শব্দ শুনলেই সে রজার দিকে চমকে তাকয় কেবলই উসখস করতে থাকে। মনে দয়া হয় ; বলি, “অমিয়া, আজ নিশ্চয় তোবে মিটিং আছে।” অমিয়া বলে, “তা হোক-না দাদা, এখনো আর-কিছুক্ষণ. -” আমি বলি, “না না, সে কি হয়। কতব্য সব আগে ।” কিন্তু, প্রায়ই দেখতে পাই, কতব্যের অনেক আগেই অনিল এসে উপস্থিত হয় । তাতে অমিয়ার কতব্য-উৎসাহের পালে যেন দমকা হাওয়া লাগে, আমাকে বড়ো বেশিकिछ्द वल८ठ श्ब्र ना । শধে অনিল নয়, বিদ্যালয়-বজাক আরও অনেক উৎসাহী যবেক আমার বাড়ির একতলায় বিকেলে চা এবং ইন্সপিরেশন গ্রহণ করতে একত্র হয়। তারা সকলেই অমিয়াকে বাগলক্ষী বলে সম্পভাষণ করে। একরকম পদবী আছে, যেমন রায়বাহাদর, পাট-করা চাদরের মতো, যাকেই দেওয়া যায় নিভাবনায় কাঁধে ঝালিয়ে বেড়াতে পারে। আর-একরকম পদবী আছে, যার ভাগ্যে জোটে সে বেচারা নিজেকে পদবীর সঙ্গে মাপসই করবার জন্যে অহরহ উৎকণ্ঠিত হয়ে থাকে। পাটই বঝেলেম, অমিয়ার সেই অবস্থা। সব দাই অত্যন্ত বেশি উৎসাহ প্রদীপ্ত হয়ে না থাকলে তাকে মানায় না ।