পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

वाणां ፋፋ > কিন্তু কাটবার কথা বললেই অতিকে ওঠে, আর ওর কাকি বলে, “আহা, এমনিই কী খারাপ দেখতে হয়েছে।" আমার বৌদিদির মৃত্যু হয়েছে— যখন এই ছেলেটি তাঁর কোলে। বোধ করি সেই শোকে দাদার খেয়াল গেল, তিনি বিলেতে এঞ্জিনিয়ারিং শিখতে গেলেন। ছেলেটি আমার নিঃসন্তান ঘরে কাকির কোলেই মানুষ । বছর দশেক পরে দাদা ফিরে এসে বলাইকে বিলাতি কায়দায় শিক্ষা দেবেন বলে প্রথমে নিয়ে গেলেন সিমলের—তার পরে বিলেত নিয়ে যাবার কথা । কাঁদতে কাঁদতে কাকির কোল ছেড়ে বলাই চলে গেল, আমাদের ঘর হল শান্য। তার পরে দ্য বছর বার। ইতিমধ্যে বলাইয়ের কাকি গোপনে চোখের জল মোছেন, আর বলাইয়ের শান্য শোবার ঘরে গিয়ে তার ছোড়া এক-পাটি জনতো, তার রবারের ফাটা গোলা, আর জানোয়ারের গল্পওয়ালা ছবির বই নাড়েন-চাড়েন; এত দিনে এই-সব চিহ্নকে ছাড়িয়ে গিয়ে বলাই অনেক বড়ো হয়ে উঠেছে, এই কথা বসে বসে চিন্তা করেন। কোনো-এক সময়ে দেখলাম, লক্ষীছাড়া শিমলগাছটার বড়ো বাড় বেড়েছে— এতদরে অসংগত হয়ে উঠেছে যে আর প্রশ্ৰয় দেওয়া চলে না। এক সময়ে দিলাম তাকে কেটে । এমন সময়ে সিমলে থেকে বলাই তার কাকিকে এক চিঠি পাঠালে, “কাকি, আমার সেই শিমলগাছের একটা ফোটোগ্রাফ পাঠিয়ে দাও।” বিলেত যাবার প্বে একবার আমাদের কাছে আসবার কথা ছিল, সে আর হল না। তাই বলাই তার বন্ধর ছবি নিয়ে যেতে চাইলে । তার কাকি আমাকে ডেকে বললেন, “ওগো পনস্থ, একজন ফেটোগ্রাফওয়ালা ডেকে আনো ।” জিজ্ঞাসা করলাম, “কেন : বলাইয়ের কাঁচা হাতের লেখা চিঠি আমাকে দেখতে দিলেন। আমি বললেম, “সে গাছ তো কাটা হয়ে গেছে ।” বলাইয়ের কাকি দুদিন অন্ন গ্রহণ করলেন না, আর অনেক দিন পর্যন্ত আমার সঙ্গে একটি কথাও কন নি। বলাইয়ের বাবা ওকে তাঁর কোল থেকে নিয়ে গেল, সে যেন ওঁর নাড়ী ছিড়ে ; আর ওর কাকা তাঁর বলাইয়ের ভালোবাসার গাছটিকে চিরকালের মতো সরিয়ে দিলে, তাতেও ওঁর যেন সমস্ত সংসারকে বাজল, তাঁর বকের মধ্যে ক্ষত করে দিলে। ঐ গাছ যে ছিল তাঁর বলাইয়ের প্রতিরপ, তারই প্রণের দোসর r অসহায়ণ ১৩৩৫