পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

by O গল্পগুচ্ছ হেমন্ত মস্ত একটা আগনের মতো যেন দাউদাউ করিয়া জনলিতে জনলিতে কাঁপতে কাঁপিতে বলিল, “তুমি আমাদের জাতি নষ্ট করিয়াছ, সবনাশ করিয়াছ— তোমাকে ইহার শাসিত ভোগ করতে হইবে”— বলিতে বলিতে তাহার কন্ঠ রন্ধ হইয়া আসিল । প্যারিশংকর ঈষৎ হাসিয়া কহিল, "আর. তোমরা আমার জাতি রক্ষা করিয়াছ, আমার সমাজ রক্ষা করিয়াছ, আমার পিঠে হাত বলাইয়া দিয়াছ ! আমার প্রতি তোমাদের বড়ো যত্ন, বড়ো ভালোবাসা !” হেমন্তের ইচ্ছা হইল সেই মহেতেই পারিশংকরকে ব্ৰহমতেজে ভস্ম করিয়া দিতে, কিন্তু সেই তেজে সে নিজেই জনলিতে লাগিল, প্যারিশংকর দিব্য সুপথ নিরাময় ভাবে বসিয়া রহিল। হেমন্ত ভগ্নকঠে বলিল, “আমি তোমার কী করিয়াছিলাম।” প্যারিশংকর কহিল, “আমি জিজ্ঞাসা করি, আমার একটিমাত্র কন্যা ছাড়া আর সন্তান নাই, আমার সেই কন্যা তোমার বাপের কাছে কী অপরাধ করিয়াছিল। তুমি তখন ছোটো ছিলে, তুমি হয়তো জান না-- ঘটনাটা তবে মন দিয়া শোনা। ব্যস্ত হইয়ো না বাপ, ইহার মধ্যে অনেক কৌতুক আছে। “আমার জামাতা নবকান্ত আমার কন্যার গহনা চুবি করিয়া যখন পালাইয়া বিলাতে গেল, তখন তুমি শিশু ছিলে। তাহার পর পাঁচ বৎসর বাদে সে যখন বারিস্টার হইয়া দেশে ফিরিয়া আসিল তখন পাড়ায় যে একটা গোলমাল বাধিল তোমার বোধ করি কিছু কিছ মনে থাকিতে পারে। কিবা তুমি না জানিতেও পার, তুমি তখন কলিকাতার স্কুলে পড়িতে। তোমার বাপ গ্রামের দলপতি হইয়া বলিলেন, ‘মেয়েকে যদি স্বামীগহে পাঠানো অভিপ্রায় থাকে তবে সে মেয়েকে আর ঘবে লইতে পরিবে না। আমি তাঁহাকে হাতে পাযে ধরিয়া বলিলাম, দাদা, এ যাত্রা তুমি আমাকে ক্ষমা করো। আমি ছেলেটিকে গোবর খাওয়াইয়া প্রায়শিচত্ত করাইতেছি, তোমরা তাহাকে জাতে তুলিয়া লও। তোমার বাপ কিছতেই রাজি হইলেন না, আমিও আমার একমাত্র মেয়েকে ত্যাগ করিতে পারিলাম না। জাত ছাড়িয়া, দেশ ছাড়িয়া, কলিকাতায় আসিয়া ঘর করিলাম। এখানে আসিয়াও আপদ মিটিল না। আমার ভ্রাতুষ্পপত্রের যখন বিবাহের সমস্ত আয়োজন করিয়াছি, তোমার বাপ কন্যাকতীদের উত্তেজিত করিয়া সে বিবাহ ভাঙিয়া দিলেন। আমি প্রতিজ্ঞা করিলাম, যদি ইহার প্রতিশোধ না লই তবে আমি ব্রাহরণের ছেলে নহি – এইবার কতকটা বকিতে পারিয়াছ—কিন্তু আর-একটা সবর করো– সমস্ত ঘটনাটি শুনিলে খুশি হইবে— ইহার মধ্যে একটা রস আছে। “তুমি যখন কলেজে পড়িতে তোমার বাসার পাশেই বিপ্রদাস চাটজের বাড়ি ছিল। বেচারা এখন মারা গিয়াছে। চাটজে-মহাশয়ের বাড়িতে কুসম নামে একটি শৈশববিধবা অনাথা কায়স্থকন্যা আশ্রিতভাবে থাকিত। মেয়েটি বড়ো সন্দেরী-বড়ো রাহমণ কলেজের ছেলেদের দটিপথ হইতে তাহাকে সম্বরণ করিয়া রাখিবার জন্য কিছ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হইয়া পড়িয়াছিল। কিন্তু বড়োমানুষকে ফাঁক দেওয়া একটি মেয়ের পক্ষে কিছুই শক্ত নহে। মেয়েটি প্রায়ই কাপড় শকাইতে দিতে ছাতে উঠিত এবং তোমারও বোধ করি ছাতে না উঠিলে পড়া মুখস্থ হইত না। পরস্পরের ছাত