পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bミ গল্পগুচ্ছ মিলনের আর-কোনো উপায় নাই। কুসম কহিল, কেমন করিয়া হইবে। আমি কহিলাম, তোমাকে কুলীনের মেয়ে বলিয়া চালাইয়া দিব। অনেক তকের পর সে এ বিষয়ে তোমার মত জানিতে কহিল। আমি কহিলাম, ছেলেটা একে খেপিয়া যাইবার জো হইয়াছে, তাহাকে আবার এ-সকল গোলমালের কথা বলিবার আবশ্যক কী। কাজটা বেশ নিরাপত্তে নিশিচন্তে নিৎপন্ন হইয়া গেলেই সকল দিকে সখের হইবে। বিশেষত, এ কথা যখন কখনো প্রকাশ হইবার কোনো সম্ভাবনা নাই তখন বেচারাকে কেন গায়ে পড়িয়া চিরজীবনের মতো অসুখী করা। “কুসম বুঝিল কি বুঝিল না, আমি বুঝিতে পারিলাম না। কখনো কাদে, কখনো চুপ করিয়া থাকে। অবশেষে আমি যখন বলি তবে কাজ নাই তখন আবার সে অসিথর হইয়া উঠে। এইরুপ অবস্থায় শ্রীপতিকে দিয়া তোমাকে বিবাহের প্রস্তাব পাঠাই। দেখিলাম, সম্মতি দিতে তোমার তিলমাত্র বিলম্বব হইল না। তখন বিবাহের সমস্ত ঠিক হইল । “বিবাহের অনতিপবে কুসমে এমনি বাঁকিয়া দাঁড়াইল, তাহাকে আর কিছুতেই বাগাইতে পারি না। সে আমার হাতে পাযে ধরে ; বলে, ইহাতে কাজ নাই, জ্যাঠামশায় । আমি বলিলাম, কী সবনাশ । সমস্ত সিথর হইয়া গেছে, এখন কী বলিয়া ফিরাইব । কুসুম বলে, “তুমি রাষ্ট্ৰ করিয়া দাও আমার হঠাৎ মৃত্যু হইয়াছে— আমাকে এখান হইতে কোথাও পাঠাইয়া দাও । আমি বলিলাম, তাহা হইলে ছেলেটিব দশা কী হইবে। তাহার বহুদিনের আশা কাল পর্ণ হইবে বলিয়া সে সবগে চড়িয়া বসিয়াছে, আজ আমি হঠাৎ তাহাকে তোমার মৃত্যুসংবাদ পাঠাইব । আবার তাহার পরদিন তোমাকে তাহার মৃত্যুসংবাদ পাঠাইতে হইবে, এবং সেইদিন সন্ধাবেলায় আমার কাছে তোমার মৃত্যুসংবাদ আসিবে। আমি কি এই বড়াবয়সে সীহত্যা ব্ৰহম্মহত্যা করিতে বসিয়াছি।’ “তাহার পর শভেলগ্নে শুভবিবাহ সম্পন্ন হইল— আমি আমার একটা কতবাদায় হইতে অব্যাহতি পাইয়া বাঁচলাম। তাহার পর কী হইল তুমি জান।" হেমন্ত কহিল, “আমাদের যাহা করিবার তাহা তো করিলেন, আবার কথাটা প্রকাশ করিলেন কেন।” পারিশংকর কহিলেন, “দেখিলাম, তোমার ছোটো ভনির বিবাহের সমস্ত সিথর হইয়া গেছে। তখন মনে মনে ভাবিলাম একটা ব্রাহরণের জাত মারিয়াছি, কিন্তু সে কেবল কতব্যবোধে। আবার আর-একটা ব্রাহরণের জাত মারা পড়ে, আমার কতব্য এটা নিবারণ করা। তাই তাহদের চিঠি লিখিয়া দিলাম। বলিলাম, হেমন্ত যে শদ্রের কন্যা বিবাহ করিয়াছে তাহার প্রমাণ আছে।” হেমন্ত বহকটে ধৈর্য সবরণ করিয়া কহিল, "এই-যে মেয়েটিকে আমি পরিত্যাগ করিব, ইহার দশা কী হইবে। আপনি ইহাকে আশ্রয় দিলেন " প্যারিশংকর কহিলেন, “আমার যাহা কাজ তাহা আমি কবিয়াছি, এখন পরের পরিত্যক্ত সীকে পোষণ করা আমার কম নহে!— ওরে, হেমন্তবাবার জন্য বরফ দিয়া একন্সাস ডাবের জল লইয়া আয়, আর পান আনিস।” হেমন্ত এই সশীতল আতিথ্যের জন্য অপেক্ষা না করিয়া চলিয়া গেল।