পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bf 。 গল্পগুচ্ছ বন্ধ নিম গাছ গায়ে গায়ে সংলগ্ন হইয়া ছায়া দান করিতেছে। একটা কথা এতদিন উল্লেখ করি নাই এবং এতদিন উল্লেখযোগ্য বলিয়া মনে হয় নাই। এখানকার সরকারি উকিল রামলোচন রায়ের বাসা আমাদের স্কুলঘরের অনতিদরে। এবং তাঁহার সঙ্গে তাঁহার সী— আমার বাল্যসখী সরবালা— ছিল, তাহা আমার জানা ছিল । রামলোচনবাবরে সঙ্গে আমার আলাপ হইল। সরবালার সহিত বাল্যকালে আমার জানাশোনা ছিল তাহা রামলোচনবাব জানিতেন কি না জানি না, আমিও নতন পরিচয়ে সে সম্প্রবন্ধে কোনো কথা বলা সংগত বোধ করিলাম না। এবং সরবালা যে কোনো কালে আমার জীবনের সঙ্গে কোনোরপে জড়িত ছিল, সে কথা আমার ভালো করিয়া মনে উদয় হইল না। একদিন ছটির দিনে রামলোচনবাবরে বাসায় তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে গিয়াছি। মনে নাই কী বিষয়ে আলোচনা হইতেছিল, বোধ করি বতর্তমান ভারতবর্ষের দরবস্থা সম্বন্ধে। তিনি যে সেজন্য বিশেষ চিন্তিত এবং মিয়মাণ ছিলেন তাহা নহে, কিন্তু বিষয়টা এমন যে তামাক টানিতে টানিতে এ সম্বন্ধে ঘণ্টাখানেক-দেড়েক অনগাল শখের দুঃখ করা যাইতে পারে। এমন সময়ে পাশের ঘরে অত্যন্ত মদ একট চুড়ির টংটং, কাপড়ের একটুখানি খসখস এবং পায়েরও একটুখানি শব্দ শুনিতে পাইলাম : বেশ বুঝিতে পারলাম, জানালার ফাঁক দিয়া কোনো কৌতুহলপণ নেত্র আমাকে নিরীক্ষণ কবিতেছে। তৎক্ষণাৎ দুখানি চোখ আমার মনে পড়িয়া গেল— বিশ্বাস সরলতা এবং শৈশব সিথরসিনগুধ দটি । সহসা হৎপিণ্ডকে কে যেন একটা কঠিন মস্টিল দ্বারা চাপিয়া ধরিল এবং বেদনায় ভিতরটা টনটন করিয়া উঠিল। বাসায় ফিরিয়া আসিলাম, কিন্তু সেই ব্যথা লাগিযা রহিল। লিখি পড়ি, যাহা করি, কিছুতেই মনের ভার দর হয় না ; মনটা সহসা একটা বহং বোঝার মতো হইয়া বকের শিরা ধরিয়া দলিতে লাগিল। সন্ধ্যাবেলায় একট স্থির হইয়া ভাবিতে লাগিলাম, এমনটা হইল কেন। মনের মধ্য হইতে উত্তর আসিল, তোমার সে সরবালা কোথায় গেল। আমি প্রত্যুত্তরে বলিলাম, আমি তো তাহাকে ইচ্ছা করিয়া ছাড়িয়া দিয়াছি । সে কি চিরকাল আমার জন্য বসিয়া থাকিবে। মনের ভিতরে কে বলিল, তখন যাহাকে ইচ্ছা করিলেই পাইতে পারিতে এখন মাথা খড়িয়া মরিলেও তাহাকে একবার চক্ষে দেখিবার অধিকারটকুও পাইবে না। সেই শৈশবের সরবালা তোমার যত কাছেই থাকুক, তাহার চুড়ির শব্দ শনিতে পাও, তাহার মাথাঘষার গন্ধ অনুভব কর, কিন্তু মাঝখানে বরাবর একখানি করিয়া দেয়াল থাকিবে। আমি বলিলাম, তা থাকা-না, সরলালা অামাল কে। না হইতে পারিত।