পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আহুতি SG সঞ্চিত, ঘনীভূত হয়ে রয়েছে। এ কান্নার সুরে আমার সমগ্র অন্তর অসীম করুণায় ভরে গেল, আমি মুহূর্তের মধ্যে বিশ্বমানবের ব্যপার বাগী হয়ে উঠলুম। এমন সময়ে হঠাৎ ঝড় উঠল, চারদিক থেকে এলোমেলে৷ ভাবে বাতাস বইতে লাগল। সেই বাতাসের তাড়নায় আকাশব আগুন যেন পাগল হয়ে ছুটোছুটি করতে লাগল। আকাশের রক্ত গঙ্গায় যেন তুফান উঠল, চারিদিকে আগুনের ঢেউ বঙ্গতে লাগল। তারপর দেখি সেই অগ্নি-প্লাবনের মধ্যে অসংখ্য নরনারীর ছায়া কিলবিল করছে, চট্‌ফট্‌ করছে। এই ব্যাপার দেখে উনপঞ্চাশ বায়ু মহানন্দে করতালি দিতে লাগল, হা হা হো হো শব্দে চীৎকার করতে লাগল। ক্রমে এই সব শব্দ মিলেমিশে একটা অট্টহাস্যে রূপান্তরিত হল,-“সে হাসির নির্মম বিকট ধ্বনি দিগদিগন্তে ঢেউ খেলিয়ে গেল। সে হাসি ক্রমে ক্ষীণ ততে ক্ষীণতর হয়ে, আবার সেই মৃদু করুণ ও কাতর ক্ৰন্দনধ্বনিতে পরিণত হল। এই বিকট তাসি আর এই করুণ ক্ৰন্দনের দ্বন্দ্বে আমার মনের ভিতর এই ধ্বংসপুরীর পূর্বস্তৃতি সব জাগিয়ে তুললে,—সে স্মৃতি ইতজন্মের কি পূর্বজন্মের তা আমি বলতে পারিনি। আমার ভিতর থেকে কে যেন আমাকে বলে দিলে যে, সে গ্রামের ইতিহাস এই--- ( & ) এই ইটকাঠের মরুভূমি হচ্ছে রুদ্রপুরের ধ্বংসাবশেষ। রুদ্রপুরের রায়বাবুৱা এককালে এ অঞ্চলের সর্বপ্রধান জমিদার ছিলেন। রায় বংশের আদি পুরুষ রুদ্রনারায়ণ, নবাব-সরকার ঢাকরি করে রায় রাষ্টয়ান খেতাব পান, এবং সেই সঙ্গে তিন পরগণার মালিকা স্বত্ব লাভ করেন। লোকে বলে এদের ঘরে দিল্লীর বাদশার স্বহস্তে স্বাক্ষরিত সনদ ছিল, এবং সেই সনদে তাঁদের কোতল কচ্ছলের ক্ষমতা দেওয়া ছিল। সনদের বলে হোক। আর না হোক, এরা যে কোতল কচ্ছল। করতেন সে বিষয়ে আর সন্দেহ নেই। কিম্বদন্তী এই যে, এমন দুর্দান্ত জমিদার এ দেশে পূর্বাপর কখনও হয়নি। এদের প্রবল প্রতাপে বাবে ছাগলে একঘাটে জল খেত। কেননা, যার উপর এরা নারাজ হতেন,