পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আহুতি s একটি পুরুষও বর্তমান ছিল না, সুতরাং তিনি ইচ্ছা করলে সকল সরিকের বাড়ী নিজ-দখলে আনতে পারতেন, তবুও তিনি উগ্রনারায়ণের একমাত্র বিধবা কন্যা রত্নময়ীকে তঁর পৈতৃক বাটি থেকে বহিস্কৃত করে দেবার কোনও চেষ্টা করেননি। তার প্রথম কারণ, রুদ্রপুরের সংলগ্ন পাঠানপাড়ার প্রজারা উগ্রনারায়ণের বাটিতে রত্নময়ীর স্বত্বস্বামিত্ব রক্ষা করবার জন্য বদ্ধপরিকর হয়েছিল। এরা গ্রামসুদ্ধ লোক পুরুষানুক্ৰমে লাঠিয়ালের ব্যবসা করে এসেছে ; সুতরাং ধনঞ্জয় জানতেন যে, রত্নময়াকে উচ্ছেদ করতে চেষ্টা করলে, খুন জখম হওয়া অনিবাৰ্য। তাতে অবশ্য তিনি নিতান্ত নারাজ ছিলেন, কেননা তার মত নিরীহ ব্যক্তি বাঙলা দেশে তখন আর দ্বিতীয় ছিল না। তার দ্বিতীয় কারণ, যার অন্নে চোঁদপুরুষ প্রতিপালিত হয়েছে, ধনঞ্জয়ের মনে তার প্রতি পূর্বসংস্কারবশত কিঞ্চিৎ ভয় এবং ভক্তিও ছিল। এই সব কারণে, ধনঞ্জয় উগ্রীনারায়ণের অংশটি বাদ দিয়ে, রায়বংশের আদবাড়ার বাদবাকি অংশ অধিকার করে বসলেন, সেও নাম মাত্র। কেননা, ধনঞ্জয়ের পরিবারের মধ্যে ছিল তঁার একমাত্র কন্যা রঙ্গিণী দাসী, আর তার গৃহজামাতা এবং রঙ্গিণীর স্বামী রীতিলাল দে। এই বাড়ীতে এসে ধনঞ্জয়ের মনের একটা বিশেষ পরিবর্তন ঘটল । অর্থ উপাৰ্জন করবার সঙ্গে সঙ্গে ধনঞ্জয়ের অর্থলাভ এতদূর বেড়ে গিয়েছিল যে, তার অন্তরে সেই লোেভ ব্যতীত অপর কোনও ভাবের স্থান ছিল না । সেই লোভের কোকেই তিনি এতদিন, অন্ধভাবে যেনি-তেনউপায়েন টাকা সংগ্ৰহ করতে ব্যস্ত ছিলেন । কিসের জন্য, কার জন্য টাকা জমাচ্ছি, এ প্রশ্ন ধনঞ্জয়ের মনে কখনও উদয় হয়নি। কিন্তু রুদ্রপুরে এসে জমিদার হয়ে বসবার পর ধনঞ্জয়ের জ্ঞান তল যে, তিনি শুধু টাকা করবার জন্যই টাকা করেছেন, আর কোনও কারণে নয়, আর কারও জন্য নয়। কেননা তার স্মরণ তল যে লখন তাঁর একটির পর একটি সাতটি ছেলে মারা যায়, তখনও তিনি একদিনের জন্যও বিচলিত হননি, একদিনের জন্যও অর্থে পার্জনে অবহেলা করেননি। তাঁর চিরজীবনের অর্থের আত্যন্তিক লোভ, এই বৃদ্ধবায়সে অর্থের আত্যন্তিক মায়ায় পরিণত হল । তঁর সংগৃহীত ধন কি করে চিরদিনের জন্য রক্ষণ করা যেতে পারে,