পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

У о о १ठ्ठभ९ष्ट्र এই ভাবনায় তঁর রাত্তিরে ঘুম হত না । অতুল ঐশ্বৰ্যও যে কালক্রমে নস্ট হয়ে যায়, এই রুদ্রপুরই ত তার প্রত্যক্ষ প্ৰমাণ। ক্রমে তার মনে এই ধারণা বদ্ধমূল হল যে, মানুষে নিজ চেষ্টায়। ধনলাভ করতে পারে, কিন্তু দেবতার সাহায্য ব্যতীত সে ধন রক্ষা করা যায় না। ইংরেজের আইন কণ্ঠস্থ থাকলেও, ধনঞ্জয় একজন নিতান্ত অশিক্ষিত ছিলেন। তার প্রকৃতিগত বর্বরতা কোনরূপ শিক্ষা দীক্ষার দ্বারা পরাভূত কিংবা নিয়মিত হয়নি। তাঁর সমস্ত মন সেকালের শূদ্ৰবুদ্ধিজাত সকলপ্রকার কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসে পরিপূর্ণ ছিল। তিনি ছেলেবেলায় শুনেছিলেন যে, একটি ব্রাহ্মণ শিশুকে যদি টাকার সঙ্গে একটি ঘরে বন্ধ করে দেওয়া যায়, তাহলে সেই শিশুটি সেই ঘরে অনাহারে প্রাণত্যাগ করে যক্ষ হয়ে সেই টাকা চিরকাল রক্ষা করে। ধনঞ্জয়ের মনে এই উপায়ে তার সঞ্চিত ধন রক্ষা করবার প্রবৃত্তি এত অদম্য হয়ে উঠল যে, তিনি যখ দেওয়াটা যে তঁর পক্ষে একান্ত কর্তব্য, সে বিষয়ে স্থিরনিশ্চিত হলেন। যেখানে ধনঞ্জয়ের কোন মায়ামমতা ছিল না, সেখানে তিনি সকল বাধা অতিক্রম করে নিজের কার্য উদ্ধার করবার কৌশলে অভ্যস্ত ছিলেন। কিন্তু এক্ষেত্রে এক বিষম বাধা উপস্থিত হল। ধনঞ্জয় একটি ব্রাহ্মণশিশুকে যখ দিতে মনস্থ করেছেন শুনে, রঙ্গিণী আহার নিদ্ৰা তাগ করলে। ফলে, ধনঞ্জয়ের পক্ষে তাঁর মনস্কামনা পূৰ্ণ করা অসম্ভব হয়ে পড়ল। ধনঞ্জয় এ পৃথিবীতে টাকা ছাড়া আর কিছু যদি ভালবাসতেন ত, সে হচ্ছে তাঁর কন্যা। চূণাসুরখির গাঁথনির ভিতর এক একটি গাছ যেমন শিকড় গাড়ে, ধনঞ্জয়ের কঠিন হৃদয়ের কোন একটি ফাটলের ভিতর এই কন্যাবাৎসল্য তেমনি ভাবে শিকড় গেড়েছিল । ধনঞ্জয় এ বিষয়ে উদ্যোগী না হলেও, ঘটনাচক্ৰে তার জীবনের শেষ সাধ পূর্ণ হল। রত্নময়ীর একটি তিন বৎসরের ছেলে ছিল । তার নাম কিরীটিচন্দ্ৰ। তিনি সেই ছেলেঢ়ি নিয়ে দিবারাত্র ঐ বাড়ীতে এক বাস করতেন, জনমানবের সঙ্গে দেখা করতেন না, তার অন্তঃপুরে কারও প্রবেশাধিকার ছিল না। রুদ্রপুরে লোকে তাঁর অস্তিত্ব পর্যন্ত ভুলে যেত, যদি না তিনি প্রতিদিন সুনান্তে ঠিক দুপুরবেলায় সিংহবাহিনীর মন্দিরে ঠাকুর