পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আহুতি Se vo) করতে নিতান্ত ইচ্ছে যায় ; সুতরাং যে উপায়েই হোক তাকে একদিন রািগণীর কাছে আনতেই হবে। রািতলাল উত্তর করলে, সে তাসম্ভব, বুতুময়ার লাঠিয়ালরা টের পেলে তার মাথা নেবে। কিন্তু রঙ্গিণী এত নাছোড় হয়ে তাকে ধরে বসল যে, রাতিলাল অগত্যা একদিন সন্ধাবেল কিরািটচন্দ্ৰকে ভুলিয়ে সঙ্গে করে রঙ্গিণীর কাছে নিয়ে এল। কিরািটচন্দ্র আসবামাত্র রঙ্গিণী ছুটে গিয়ে তাকে কোলে তুলে নিলে, চুমা খেলে, কত আদর করলে, কত মিষ্টি কথা বললে। তারপর সে কিরািটচন্দ্রর গায়ে লাল চেলির যোড়, তার গলায় ফুলের মালা, তার কপালে রক্তচন্দনের ফোঁটা, আর তার হাতে দু’গাছি সোণার বালা পরিয়ে দিলে। কিরাটচন্দ্রের এই সাজ দেখে রাতিলালের চোখমুখ আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠল। তারপর রঙ্গিণী হঠাৎ তার হাত ধরে টেনে নিয়ে, সেই ব্ৰাহ্মণ শিশুকে সেই অন্ধকূপের ভিতর পূরে দিয়ে, বাইরে থেকে দরজার গা-চাবি বন্ধ করে চলে গেল। রািতলাল এ-দোর ও-দোর ঠেলে দেখে বুঝলে যে, রঙ্গিণী তাকেও তার শোবার ঘরে বন্দী করে চলে গিয়েছে। রাতিলাল ঠেলে, ঘুসো মেরে, লাথি মেরে সেই অন্ধকূপের কপাট ভাঙ্গাবার চেষ্টা করে দেখলে, সে চেষ্টা বৃথা। সে কপাট এত ভারি। আর এত শক্ত যে, কুড়োল দিয়েও তা কাটা কঠিন। কিরাটিচন্দ্ৰ সেই অন্ধকার ঘরে বন্ধ হয়ে প্রথমে ককিয়ে কঁদিতে লাগলে, তারপর রািতলালকে দাদা দাদা বলে ডাকতে লাগব্লুে। দু'তিন ঘণ্টার পর তার কান্নার আওয়াজ আর শুনতে পাওয়া গেল না। রাতিলাল বুঝলে সে কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়েছে। তারপর তিন দিন তিন রাত নিজের ঘরে বন্দী হয়ে রাতিলাল কখনও শোনে যে কিরািটচন্দ্ৰ দুয়োরে মাথা ঠুকছে, কখনও শোনে সে কঁদিছে, আবার কখনও বা চুপচাপ। রীতিলাল এই তিন দিন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দিনের ভিতর হাজার বার পাগলের মত ছুটে গিয়ে সেই কপাট ভাঙতে চেন্টা করেছে অথচ সে দরজা একচুলও নাড়াতে পারেনি। যখন কান্নার আওয়াজ তার কাণে আসত, তখন রাতিলাল দুয়োরের কাছে ছুটি গিয়ে বলত, “দাদা, দাদা, আমন করে কেঁদ না, কোনও ভয় নেই, আমি এখানে আছি ।”