পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

እ ❖ ኳ” ११2शं সোয়াস্তি ছিল না। দরিদ্রের ঘরে কোহিনুর থাকলে তার রাত্তিরে ঘুম হওয়া অসম্ভব। বড়বাবুর অবস্থাও ঠিক তাই হয়েছিল। এ রত্ন হারাবার ভয় মুহূর্তের জন্যও তার মনকে ছেড়ে যেত না, তাই তিনি সকালসন্ধ্যা কিসে তা রক্ষা করা যায়, সেই ভাবনা সেই চিন্তাতেই মগ্ন থাকতেন। আপিসের কাজে তন্ময় থাকাতে, কেবলমাত্র দশটা-পাঁচটা তিনি এই দুর্ভাবনা থেকে অব্যাহতি লাভ করতেন। বড়বাবুর যদি আপিস না থাকত, তাহলে বোধ হয় তিনি ভেবে ভেবে পাগল হয়ে যেতেন । বড়বাবুর মনে তঁর স্ত্রীর সম্বন্ধে নানারূপ সন্দেহের উদয় হত। অথচ সে সন্দেহের কোনও স্পষ্ট কারণ ছিল না। কিন্তু তার থেকে তিনি কোনরূপ সান্তুনা পেতেন না,-কেননা অস্পষ্ট ভয় অস্পষ্ট ভাবনাই আমাদের মনকে সব চাইতে বেশি পেয়ে বসে এবং বেশি চেপে ধরে। তার স্ত্রীকে সন্দেহ করবার কোনরূপ বৈধ কারণ না থাকলেও, বড়বাবুর মনে তার স্বপক্ষে অনেকগুলি ছোটখাট কারণ ছিল। প্রথমত, সাধারণত স্ত্রীজাতির প্রতি তার অবিশ্বাস ছিল। “বিশ্বাসো নৈব কর্তব্যঃ স্ত্রীয়ু রাজকুলেষু চ”, এ বাক্যের প্রথম অংশ তিনি বেদবাক্য স্বরূপে মানতেন। তারপর তার ধারণা ছিল যে, রূপ আর চরিত্র প্রায় একাধারে পাওয়া যায় না। র্তার শ্বশুর পরিবারের অন্তত পুরুষদের চরিত্রবিষয়ে তেমন সুনাম ছিল না। পাটের কারবারে হঠাৎ অগাধ পয়সা করায়, সে পরিবারের মাথা অনেকটা বিগড়ে গিয়েছিল ; ফলে, তার শ্বশুরবাড়ীর হালচাল অসম্ভব রকম বেড়ে গিয়েছিল। তঁর শ্যালক তিনটি যে আমোদ আহলাদ নিয়েই দিন কাটাতেন, এ কথা ত সহরসুদ্ধ লোক জানত, এবং এদের ভাইবোনের ভিতর যে পরস্পরের অত্যন্ত মিল ছিল, সে সত্য বড়বাবুর নিকট অবিদিত ছিল না। ভাইদের সঙ্গে দেখা হলে পটেশ্বরীর মুখ হাসিতে ভরে উঠত, তাদের সঙ্গে তার কথা আর ফুরত না, ঘণ্টার পর ঘণ্টা সে অনর্গল বকে যেত, আর হেসে কুটি কুটি হত। এ সব সময়ে বড়বাবু অবশ্য উপস্থিত থাকতেন না, তাই এদের কি যে কথা হত, তা তিনি জানতেন না। কিন্তু তিনি ধরে