পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ty কিশোরীও যে গাড়ীতে উঠেছিলেন, প্রথমে তা লক্ষ্য করিনি। এখন দেখলুম তার একটি Mr. Day-র ঈষৎ-সংক্ষিপ্ত শাড়ী-বাঁধাই সংস্করণ। এর বেশি আর কিছু বলতে চাইনে। Weismann। যাই বলুন, বাপের রূপ সন্তানে বর্তীয়, তা সে-রূপ স্বেপার্জিতই হোক আর অন্বয়াগতই হোক। অপরটির রূপ বর্ণনা করা আমার পক্ষে অসাধ্য ; কেননা আমি পূর্বেই বলেছি যে, আমার চােখে ও মনে সেই মুহূর্তে যা চিরদিনের মত ছেপে গেল, সে হচ্ছে একটা আলোর অনুভূতি। এর বেশি আমি আর কিছু বলতে পারিনে। আমি যদি চিরজীবন আঁক না কম্বে কবিতা লিখাতুম, তাহলে হয়ত তার চেহারা কথায় একে তোমাদের চোখের সুমুখে ধরে দিতে পারতুম। আমার মনে হল সে আপাদমস্তক বিদ্যুৎ দিয়ে গড়, তার চােখের কোণ থেকে, তার আঙুলের ডগ৷ দিয়ে, অবিশ্রান্ত বিদ্যুৎ ঠিকরে বেরুচ্ছিল। Leydon Jar-এর সঙ্গে স্ত্রীলোকের তুলনা দেওয়াটা যদি সাহিত্যে চলত, তাহলে ঐ এক কথাতেই আমি সব বুঝিয়ে দিতুম। সাদা কথায় বলতে গেলে, প্রাণের চেহারা তার চােখ-মুখ, তার অঙ্গ-ভঙ্গী, তার বেশ-ভূষা, সকলের ভিতর দিয়ে অবাধে ফুটে বেরাচ্ছিল। সেই একদিনের জন্য আমি বিশ্বাস করেছিলুম যে, অধ্যাপক জে. সি. বােসের কথা সত্য-প্ৰাণ আর বিদ্যুৎ একই পদার্থ। এই উচ্ছাস থেকে তোমরা অনুমান করছ যে আমি প্রথম দর্শনেই তার ভালবাসায় পড়ে গেলুম। ভালবাসা কাকে বলে তা জানিনে, তবে এই পর্যন্ত বলতে পারি যে, সেই মুহূর্তে আমার বুকের ভিতর একটি নূতন জানালা খুলে গেল, আর সেই দ্বার দিয়ে আমি একটা নূতন জগৎ আবিষ্কার করলুম, যে জগতের আলোয় মোহ আছে, বাতাসে মদ আছে। এই থেকেই আমার মনের অবস্থা বুঝতে পারবে। আমার বিশ্বাস, আমি যদি কবি হতুমি তাহলে তোমরা যাকে ভালবাসা বল, তা আমার মনে অত শীগগির জন্মাত না। যারা ছেলেবেল থেকে কাব্যচর্চা করে, তারা ওজিনিসের টীকে নেয়। আমাদের মত চিরজীবন আঁক-কষী লোকদেরই ওরোগ চট্ট করে পেয়ে বসে।