পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাম ও শুষ্কাম। তেমনি উদ্বেলিত আন্দোলিত হয়ে উঠল, আমাদের উৎসাঠি তেমনি সংধুক্ষিত প্ৰজ্বলিত হয়ে উঠল। এবার তঁরা ধরলেন এক নতুন সুর। ভারতবর্ষের আধ্যাত্মিক অতীতকে টেকে গুজে, ভারতবর্ষের আর্গিক ভবিষ্যতের তারা ব্যাখান সুরু করলেন। তঁদের বাক্যবলে সে ভবিষ্যৎ অন্নবােস্ত্র ধনরত্বে পরিপূর্ণ হয়ে উঠল। এ ছবি দেখে সকলোরি মুখে জল এল। যারা পূর্বে বনে চলে গিয়েছিল তারা আবার ঘরে ফিরে এল । রাম যখন স্পষ্ট করে বললেন যে, “আমি দেশের চিনি খাপ", আর শ্যাম যখন স্পষ্ট করে লিখলেন যে, “আমি বিদেশের নুন খাব না।” তখন আর কারও বুঝতে বাকী থাকল না যে, অতঃপর রামের মুখ দিয়ে শুধু মধুক্ষরণ হবে, আর শ্যামের কলম। শুধু দেশের গুণ গাঠপে, অর্থাৎ র্তারা দু’জনে একমনে একালের যুগধর্ম প্রচার করবেন ; আমনি আমাদের মনে তঁদের প্রতি ভক্তি উথলে উঠল। যুগধর্মের প্রচারে যাতে কোনরূপ ব্যাঘাত না ঘটে, তার জন্য দেশের লোক চাঁদ করে টাকা তুলে শ্যামের জন্য একখানি ইংরেজী কাগজ বার করে দিলেন, সে কাগজের নাম হল--Nationalist || শ্যামের হাতে পড়ে সেখানি হয়ে উঠল—একখানি চাবুক। শ্যাম সজোরে তা আকাশের উপর চালাতে লাগলেন, তার পঢ়পটানির আওয়াজে আকাশ বাতাস ভরে গেল। সেই রণবাদ্য শুনে আমাদের বুকের পার্ট। দশগুণ বেড়ে গেল । কথায় বলে, দিন যেতে জানে, ক্ষণ যেতে জানে না। শ্যামের ভাগ্যে ঘটলও তাই। এই চাবুক দৈবাৎ একদিন একটি বড়সাঙ্গেবের গায়ে লেগে গেল। তিনি তৎক্ষণাৎ শ্যামের বিরুদ্ধে মানহানির নালিশ করলেন। দেশময় হৈ হৈ রৈ রৈ পড়ে গেল। যথাসময়ে ফৌজদারী আদালতে শ্যামের বিচার ৩ল ; এবং এই সূত্রে রাম তার অসাধারণ আইনের জ্ঞান ও অসামান্য ওকালতি-বুদ্ধি দেখাবার একটি অপূর্ব সুযোগ পেলেন। রামের জেরার জোরে, বাহাজের বলে, আইনের ঠিকমতে মামলা মাঝপথেই ফেঁসে গেল।