পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sb፦8 %द्भश्यंश् দু’একটি নমুনা তঁদের শোনালুম, তখন তঁরা নীল-লোহিতকে অব্যাহতি দিলেন এই বলে যে,-“যাও, আর মিথ্যে কথা বলে না৷ ” যদিচ কাইজারের সঙ্গে নীল-লোহিতের বন্ধুত্বের গল্প শুনে তাদের মনে একটু খটুকী লেগেছিল। এর পর থেকে নীল-লোহিত আর মিথ্যা গল্প করেন না, ফলে গল্পও করেন না। কেননা তাঁর জীবনে এমন কোনও সত্য ঘটনা ঘটেনি, ঐ এক গ্রেপ্তার হওয়া ছাড়া-যার বিষয় কিছু বলবার আছে। সঙ্গে সঙ্গে তার প্রতিভা একেবারে অন্তৰ্হিত হয়েছে। আসল কথা কি জানেন ? --তিনি মিথ্যে কথা বলতেন না, কেননা ওসব কথা বলায় তঁর কোনরূপ স্বাৰ্থ ছিল না । ধন-মান-পদ-মৰ্যাদা সম্বন্ধে তিনি সম্পূর্ণ উদাসীন ছিলেন। তিনি বাস করতেন। কল্পনার জগতে। তাই নীল-লোহিত যা বলতেন, সে সবই হচ্ছে কল্পলোকের সত্য কথা। তার সুখ, তার আনন্দ, সবই ছিল ঐ কল্পনার রাজ্যে অকাধে বিচরণ করায়। সুতরাং সেই কল্পলোক থেকে টেনে তঁকে যখন মাটির পৃথিবীতে নামান হল, তখন যে তাঁর প্রতিভা নষ্ট হল, শুধু তাই নয়; তাঁর জীবনও মাটি হল।--দিনের পর দিন তার অবনতি হতে লাগিল । গল্প বলা বন্ধ করবার পর তিনি প্রথমে বিবাহ করলেন, তারপর চাকরি নিলেন । তারপর তার বছর বছর ছেলেমেয়ে হতে লাগল। তারপর তিনি বেজায় মোটা হয়ে পড়লেন, তার সেই মুখর চােখ মাংসের মধ্যে ডুবে গেল। এখন তিনি পূরোপুরি কেরাণীর জীবন যাপন করছেন-যেমন হাজার হাজার লোক করে থাকে। লোকে বলে যে, তিনি সত্যবাদী হয়েছেন ; কিন্তু আমার মতে তিনি মিথ্যার পঙ্কে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়েছেন। তঁর স্বধৰ্ম হারিয়ে, যে জীবন তাঁর আত্মজীবন নয়, অতএব তার পক্ষে সম্পূর্ণ মিথ্যা জীবন—সেই জীবনে তিনি আবদ্ধ হয়ে পড়েছেন। তঁর আত্মীয়স্বজনেরা এই ভেবেই খুসি যে, তিনি এতদিনে মানুষ হয়েছেন,-কিন্তু ঘটনা কি হয়েছে জানেন ? নীল-লোহিতের ভিতর যে মানুষ ছিল, তার মৃত্যু হয়েছে-যা টিকে রয়েছে তা হচ্ছে সংসারের সার ঘানি ঘোরাবার একটা রক্তমাংসের যন্ত্র মাত্ৰ ।