পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Siso *iझम९ći३ হাত ধরাধরি করে। একলা কিছু করবার সাহস ও শক্তি তাদের কারও শরীরে নেই। নীল-লোহিত তাই “একলা চলরে” বলে সোর্চ অমানিশার অন্ধকারের ভিতর ঝাঁপিয়ে পড়লেন । এবার তিনি রাজপথ ছেড়ে সুরাটের গলিঘূজিতে ঢুকে পড়লেন। সে সব গলিতে যেন অন্ধকারের বান ডেকেছে। রাস্তার দু’পাশের বাড়ীগুলোর দুয়োর, জানােলা সব জেলের ফটকের মত কষে বন্ধ। চারপাশে সব নির্জন, সব নীরব, নিঝুম ; যেন সমগ্র সুরাট সহরটা রাত্তিরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। মধ্যে মধ্যে দু’একটা বাড়ীর গবাক্ষ দিয়ে আলো দেখা যাচ্ছে। কিন্তু যেখানেই আলো, সেইখানেই কান্নার সুর। সুরাটে তখন খুব প্লেগ হচ্ছিল। নীল-লোহিত ছাড়া অপর কেউ এই শ্মশানপুরীর মধ্যে ঢুকলে ভয়ে অচৈতন্য হয়ে পড়ত। কিন্তু তিনি ঘণ্টা দুই এই অন্ধকারের ভিতর সাঁতরাতে সাঁতরাতে শেষটায় কূলে গিয়ে ঠেকালেন। হঠাৎ তিনি একটা বাড়ীর সুমুখে গিয়ে উপস্থিত হলেন, যার দোতলার ঘরে দেদার ঝাড়লণ্ঠন জ্বলছে, আর যার ভিতর দিয়ে নিঃসৃত হচ্ছে স্ত্রীকণ্ঠের অতি সুমধুর সঙ্গীত। নীল-লোহিত তিলমাত্র দ্বিধা না করে নিজের মাথার পাগড়ীটি খুলে সেই বাড়ীর বারান্দার কাঠের রেলিংয়ে লাগিয়ে দিয়ে, সেই পাগড়ী বেয়ে দোতলায় উঠে গেলেন। তঁর পায়ের শব্দ শুনে ঘর থেকে একটি অপসরোপিম রমণী বেরিয়ে এলেন। তারপর দুজনে পরস্পরের মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে রইলেন। এমন সুন্দরী স্ত্রীলোক নীল-লোহিত জীবনে কিম্বা কল্পনাতে ইতিপূর্বে আর কখনও দেখেননি। নীল-লোহিতের মনে হল যে, রমণীটি সুরাটের সুকল সুন্দরীর সংক্ষিপ্তসার। তঁর সর্বাঙ্গ একেবারে হীরেমাণিকে ঝক ঝক করছিল। নীল-লোহিতের চোখ সে রূপের তেজে বলসে যাবার উপক্রম হল, তিনি মাটির দিকে চোখ নামালেন। প্ৰথম কথা কইলেন স্ত্রীলোকটি। তিনি হিন্দীতে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কে ?” নীল-লোহিত উত্তর করলেন, “বাঙ্গালী।” “সুরাটে কেন এসেছ ?” “কংগ্রেস ডেলিগেট হয়ে ।”